পড়ালেখার পাশাপাশি একটি মুদি দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করতো চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান জয় কানু (১৮)। তবুও সে পড়ালেখা থেকে পিছপা হয়নি। জীবনযুদ্ধে অনেক সংগ্রাম আর পরিশ্রম করে আজ সে সফলতা অর্জন করেছে। একজন চা-শ্রমিক সন্তান হিসেবে সে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করে। আপন মেধায় এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে। হতে চায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে জয় কানু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এবার এসএসসি পাশ করেছে। তার সাফল্যে আনন্দিত স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং অভিভাবকরা। তবে তার এ সফলতা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো এত সহজ ছিলনা। উপজেলার শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী চা-বাগানের। এবার শত প্রতিকূলতাকে ডিঙ্গিয়ে শুধু জয় কানুই চা-শ্রমিকদের মধ্যে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছে।
জয় কানু উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীপুর চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা গণেশ কানু ও গীতা কানু দম্পতির ছেলে। পরিবারের তিন ভাই বোনদের মধ্যে জয় কানু সবার ছোট। তাঁর বড় বোন রুপা কানু কুলাউড়া সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে ও মেঝ বোন প্রিয়াঙ্কা কানু একই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বাবা ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরী করছেন আর মাতা গীতা কানু গাজীপুর চা-বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নেই। বাবা-মায়ের উপার্জন দিয়ে কোনমতে চলছে তাদের পরিবার। বাবার উপার্জন দিয়ে এনজিও থেকে আনা ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে এবং মায়ের উপার্জন দিয়ে পরিবার চালানো অনেক কষ্টসাধ্য ছিল। তাই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জয় কানু স্থানীয় গাজীপুর বাজারে একটি মুদির দোকানে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে কাজ করেছে।
৩০ নভেম্বর বুধবার মেধাবী ছাত্র জয় কানুর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এসময় জয় কানু প্রতিবেদককে জানায়, যখন স্কুল খোলা থাকতো তখন রাতে মুদি দোকানে কাজ করতো। দিন কিংবা রাতে যখন সময় পেত তখন গড়ে প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা পড়ালেখা করতো। বাগানের ব্র্যাক স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণীতে ৪.৬৭ ও শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণীতে ৪.২৯ পেয়ে সে পাশ করেছে। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার সময় তাকে দোকানে কাজ করে পড়তে হয়েছিল পরিবারের অভাব অনটনের কারণে। টাকার সমস্যার কারণে সে তেমন প্রাইভেটও পর্যন্ত পড়েনি। শুধু পরীক্ষার আগে দুই মাস প্রাইভেট পড়েছিল। এখন তাঁর স্বপ্ন ভালো একটি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করার। একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জীবনের পরবর্তী ধাপে সফলতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কারণে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া তার জন্য সম্ভবপর নাও হতে পারে। তাই প্রশাসনসহ সমাজের সকল বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছে সে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কাইয়ূম বলেন, জয় কানু ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে আমাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপর থেকে শত কষ্টের মাঝেও সে তার প্রবল ইচ্ছে শক্তি দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। আমার বিদ্যালয়ে এবার ১৩২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তারমধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী চা-বাগানের। বিদ্যালয়ে ৭ টি জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের মধ্যে চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় কানু জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করায় আমরা খুব খুশি। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। সমাজের সকলকে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।