বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
ফ্রান্সে জুড়ী উপজেলা কমিউনিটি ট্রাস্ট গঠন সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন ও শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার কুলাউড়ায় হিউম্যানিটি রক্তদান সংস্থার শুভ সূচনা কুলাউড়ায় তালামীযে ইসলামিয়ার মীলাদুন্নবী (সা.) র‍্যালী অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় ভাগ-বাটোয়ারা না করে পারিবারিক প্রায় ৬০ কোটি টাকার যৌথ সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানালেন মখলিছ মিয়া কুলাউড়ায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সিরাত সম্মেলন মৌলভীবাজার জেলা শিবিরের ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশ সম্পন্ন কুলাউড়ায় ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশন অব নিউজার্সি’র উদ্যোগে নগদ অর্থ বিতরণ কুলাউড়ায় শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার অভিযোগ

আমাদের ব্যর্থতায় শেখ মুজিব বিশ্বে অনাদৃত

জুয়েল সাদত
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১

পুরো আগস্ট মাসে বাতাস ভারী থাকে। শোকের মাতম। জাতির জনকের জন্য মন-প্রাণ কাঁদে। ইতিহাসে অনেক দেশের রাষ্ট্র নায়ক বা বিশেষ ব্যক্তিরা আততায়ীর হাতে মারা গেছেন। যেমন জন এফ কেনেডি, বেনজির ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, তালিকা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে সপরিবারে মারা গেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

তার আত্মত্যাগ আমরা সারা জীবন মনে রাখব। উনার সাথে পরিবারে বাকিদের কি অপরাধ ছিল, তা আমরা কেউ ভাবি না। তিনি রাজনীতি করতেন শত্রু থাকতেই পারে।

রাজনীতিতে সবাইকে খুশি করা যায় না। তবে যিনি ৫৫ বছরের জীবিত অবস্থায় কম বেশি জেলেই কাটালেন ১৪ বছর। উনার মতো একজন দেশপ্রেমিক বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

আজ অনেকেই অতি উৎসাহে লিখছেন, যাদের আগে দেখা মেলেনি। তারা কখনো ইনডেমনিটি বাতিল নিয়ে লিখেননি, আমরা ৯১ সাল থেকেই এই নিয়ে লিখেছি। আজ বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের অতিরঞ্জিত কাজ দেখলে হাসি পায়। আমরা যারা জাতির পিতাকে ভালোবাসতাম আজও বাসি।

মহাত্মা গান্ধীকে যদি বিশ্ব জানতে পারে, নেলসন মেন্ডেলাকে যদি বিশ্ব জানতে পারে তাহলে শেখ মুজিবকে কেন জানবে না? এই কাজটা কে করবে?

জাতির জনকের প্রিয় দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ অনেক দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে বঙ্গবন্ধুকে সবার হৃদয়ে স্থান দিতে সচেষ্ট ছিল। বিশ্বের কোথাও গৃহহীনদের ফ্রি বাড়ি দেওয়ার নজির নেই সেটাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যদিও সেই বাড়ি-ঘর তৈরিতে নানা অনিয়ম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

পৃথিবীর অনেকেই জানেন না, জাতির জনক শেখ মুজিব ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫৫ বছর বেঁচেছিলেন, তাও আবার তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। যা বিশ্বের জনপ্রিয় নেলসন মেন্ডেলার সমকক্ষ। মাত্র ৪৫ বছর তিনি আলো বাতাসে ছিলেন। তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে।

পৃথিবীতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কেউ নেই যার এই করুণ জীবনী। শুধু বাংলাদেশিরা তার কথা জানি ও বলে বেড়াচ্ছি। কিন্তু বিশ্ব ইতিহাসে তার অবদান সামগ্রিকভাবে প্রচার কে করবে? তার বিশ্বের একজন আইডল নেতা হওয়ার সুযোগ ছিল। মহাত্মা গান্ধীকে যদি বিশ্ব জানতে পারে, নেলসন মেন্ডেলাকে যদি বিশ্ব জানতে পারে তাহলে শেখ মুজিবকে কেন জানবে না? এই কাজটা কে করবে?

কেন বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে জাতির জনকের উপর কোনো বই থাকবে না? কেন তার জীবনী ছোট-বড় আকারে বিশ্বের নামী দামী প্রকাশনী প্রকাশ করবে না?

আমাদের তো টাকার কোনো অভাব নেই। আমাদের সরকারের উচিত বিশ্বের নামী দামী লেখকদের দিয়ে তার জীবনী প্রকাশ করা—বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। শত শত কোটি টাকা খরচ করে জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করেছি, দেশের সেরা সেরা লেখকরা গল্প, কবিতা, গান রচনা করছেন। কিন্তু তা তো সবই বাংলাদেশ কেন্দ্রিক।

বাংলাদেশের সাথে যেসব দেশের সুসম্পর্ক আছে, সেই সব ভাষায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী প্রকাশ করা উচিত ছিল। বিশ্বের অনেক দেশে জন্মশতবার্ষিকী পালিত হলো, কিন্তু বিশ্বের নতুন প্রজন্মকে আমরা তাকে চেনাব কীভাবে? আমরা যদি বাংলাদেশে থেকে নেলসন মেন্ডেলাকে চিনি, আমাদের বাচ্চারা যদি নেলসন মেন্ডেলাকে চেনে, আমাদের বাচ্চার যদি মার্টিন লুথার কিং’কে চেনে তাহলে আমেরিকান নতুন প্রজন্ম কেন বাংলাদেশের জাতির জনককে চিনবে না?

আমাদের আইকনিক নেতা জাতির জনক তাদের কারও চেয়ে কম নন। তিনি অনেক ঊর্ধ্বে, তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের মুক্তির জন্য। আমাদের উচিত বিশ্বের সেরা সেরা লাইব্রেরিতে শেখ মুজিবের উপর বই প্রেরণ করা। তা কীভাবে সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বের সেরা সেরা প্রকাশনীকে বলতে হবে তারা যেন তার সম্পর্কে বই প্রকাশ করে। তাহলেই তাকে বিশ্বের আইকন হিসেবে পরিগণিত করা যাবে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের অনেক আইকনিক ব্যবসায়ীরা রয়েছেন, দূতাবাস তাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের সাথে যৌথভাবে ইংরেজি বই প্রকাশ করে বা সে দেশের ভাষায় জাতির জনকের জীবনী ছোট আকারে বা বড় আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারে।

তাকে নিয়ে গবেষণার বিস্তর মাধ্যম পড়ে আছে। আমরা তাকে নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করে তাকে ক্ষুদ্রতায় আবদ্ধ করেছি।

ব্যবয়ায়ীদের অনুরোধ করা যায় শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর পরেও যেন তারা স্পন্সর করে তার জীবনী প্রকাশ করে দেশে ও বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। শুধু জীবনী নয়, বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, জীবনের লক্ষ্য, কারাগারের জীবন নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

আসলে আমরা বাংলাদেশের মধ্যেই উনাকে আটকে রেখেছি। তার সঠিক বিশ্ব মূল্যায়ন হচ্ছে না। যে শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করে তার জন্মশতবার্ষিকীর বাজেট করছি, এই বাজেটের একটি অংশ দিয়ে যদি আমরা তাকে ব্র্যান্ডিং করতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।

জন্মশতবার্ষিকীতে তার জন্য গান রচিত হয়েছে, কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল, শত শত বই, গল্প, উপন্যাস রচিত হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু তার পরিধি সব কিছুই দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের বিশ্ব দরবারে তাকে তুলে ধরতে হবে।

অসাধারণ এক অনন্য মানব শেখ মুজিব। অসাধারণ ছিল তার চিন্তা। লোভ লালসাহীন, এক প্রাণবন্ত হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্ন পুরুষ ছিলেন। তাকে নিয়ে গবেষণার বিস্তর মাধ্যম পড়ে আছে। আমরা তাকে নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি করে তাকে ক্ষুদ্রতায় আবদ্ধ করেছি। তার অনন্য পোশাকটাও আজ অবমূল্যায়িত হচ্ছে। তিনি তার একটি পোশাককে তার নামে সমাদৃত করতে পেরেছেন। মুজিব কোট বলতে একটি বিশেষ পোশাককে বোঝায়। এ নিয়েও গবেষণার সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতেও তার জীবনী পাঠ্যসূচিতে প্রকাশ জরুরি। আমাদের উদাসীনতায় তিনি ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছেন। সঠিক গবেষণার মাধ্যমে যদি আমরা তাকে বিশ্বে তুলে ধরতে পারি তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে জানবে, তার প্রতি আগ্রহী হবে। তাকে নিয়ে তারাও নতুনভাবে গবেষণা করবে।

জুয়েল সাদত ।। সাংবাদিক, কলামিস্ট

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ | কেবিসি নিউজ ফ্রান্স
Theme Developed BY NewsFresh