কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের আবুতালিপুর জামে মসজিদকে পারিবারিক কমিটির কবল থেকে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছেন এলাকার লোকজন। এ নিয়ে পঞ্চায়েতের সাধারণ লোকজন স্বাক্ষর করে জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, জয়চন্ডী ইউনিয়নের আবুতালিপুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় ২০১৮ সালে। ৩ বছর মেয়াদি এ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান খা’কে এবং কোষাধ্যক্ষ করা হয় মো: আব্দুল হাসিমকে। কিন্তু দেওয়ান খা সভাপতির দায়িত্ব পেয়েই নিজের বড় ছেলে বাদই খা’কে সম্পাদক এবং নিজের বলয়ের কিছু সদস্য নিয়ে একটি পারিবাকি কমিটি গঠন করেন। এরপর থেকে এলাকার কাউকে কোন তোয়াক্কা না করেই নিজের একক মতে চালাতে থাকেন পঞ্চায়েত।
আয়কৃত টাকা-পয়সা কোষাধ্যক্ষ বা মসজিদের একাউন্টে জমা না করে নিজের মনগড়া ব্যয় করতে থাকেন। এভাবে ২০২০ সালে সেই বিতর্কিত সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন এলাকার লোকজন গত ৩ বছরের আয়-ব্যয় হিসাব চান এবং নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু বিতর্কিত সভাপতি দেওয়ান খা পুরনো হিসাব না দিয়ে জোরপূর্বক স্বপদে বহাল থাকার পায়তারা শুরু করেন। এতে এলাকাজুড়ে শুরু হয় নানা ধরনের কাঁনাঘোষা।
এনিয়ে এলাকার লোকজন ৩ সদস্যের একটি অডিট কমিটি গঠন করে তাদেরকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। অডিট কমিটি বেশ কয়েকদিন খাতাপত্র ও তথ্যউপাত্ত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ সম্বলিত ২ পৃষ্ঠার একটি রেজাল্ট পঞ্চায়েতের কাছে জমা করেন। যেখানে আয়-ব্যয়ের হিসাবে বেশ গড়মিল প্রকাশ পায়। এতে সভাপতি দেওয়ান খা ক্ষিপ্ত হয়ে অডিটে যারা ছিলেন তাদেরকে পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এসময় তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে প্রায় ৩ মাস মসজিদের ধারে-কাছেও আসেননি এবং হিসাবও প্রদান করেননি।
উনার দাম্ভিকতা আর একগোয়ামির কারনে আজ সুন্দর এই এলাকাটি দু’দলে বিভক্ত। বর্তমানে তিনি (দেওয়ান খা) ইমাম নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছেন। পঞ্চায়ের অনেকেই বিতর্কিত (বর্তমান) ইমাম এর পেছনে নামাজ পড়ছেন না। কিন্তু দেওয়ান খা মানুষের কথাকে কর্ণপাত না করেই জোরপূর্বক সেই ইমামকে মসজিদে বহাল রেখেছেন। এনিয়ে কেউ কিছু বললেই তাকে পঞ্চায়েত থেকে বহিস্কারের হুমকি দেন দেওয়ান খা।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একাধিকবার বসে বাপবেটার কমিটি অবৈধ বলেন। কিন্তু সভাপতি উনার দলীয় লোক হওয়ায় ঘটনা নিষ্পত্তি না করে সময় ক্ষেপন করেন। শেষ পর্যন্ত ঘটনার কোন সুরাহা হয়নি।
সবমিলিয়ে আবুতালিপুর এলাকার মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান অনেকেই। অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটার আগে মসজিদের আয়-ব্যায়ের হিসাব ও নতুন কমিটি গঠনের জন্য চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয় লোকজন।
এব্যাপারে সভাপতি দেওয়ান খা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পঞ্চায়েত খুব সুন্দরভাবে চলছে। কারো কোন অভিযোগ নেই।
এব্যাপারে জয়চন্ডী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান, লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। খুব শিগগিরই সবাইকে নিয়ে বসে এটির মিমাংসা করা হবে।