মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অটোরিকশা চুরির চেষ্টায় জড়িত সন্দেহে গণপিটুনিতে মো. সোনাম (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে গত শনিবার উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
রবিবার কুলাউড়া থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভাটেরা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুমসহ চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
পুলিশ, মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল কাইয়ুমের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ঢুকে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা চুরির চষ্টা চালায়।
এক পর্যায়ে কাইয়ুমসহ স্থানীয় লোকজন চুরির চেষ্টায় জড়িত সন্দেহে উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের রাউৎগাঁও উত্তরভাগ এলাকার বাসিন্দা মৃত মতিন মিয়ার ছেলে মো. সোনামকে আটক করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করে। তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। তাদের নির্যাতনের আঘাতে ওই যুবকের মাথাসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর জখম হয়। এছাড়া ডান হাতের কব্জিতে হাড় ভাঙা হয়। খবর পেয়ে ভাটেরা অস্থায়ী ক্যাম্পের পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় অজ্ঞাতনামা যুবককে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আহত সোনামকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার রাতে সোনাম মারা যান।
এর আগে সন্ধ্যায় পুলিশের ভাটেরা অস্থায়ী ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর মিয়া বাদী হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ও ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সজ্জাদ আলীর ছেলে আব্দুল কাইয়ুম (৫০) সহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আব্দুল কাইয়মের ভাই লোকমান হোসেন (৫৫), টিলাগাঁও ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল গণির ছেলে জাহির মিয়া (২৩), দেওকাপনের বাসিন্দা মৃত মছকিন মিয়ার ছেলে ইজাজুল আহমেদ (২০), দক্ষিণবাগের বাসিন্দা মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে আনসার মিয়া (৪৮)। ওই দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম, দক্ষিণভাগ গ্রামের বাসিন্দা মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৪৬), একই এলাকার বাসিন্দা মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে আনসার মিয়া (৪৬), ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত সোনা মিয়ার ছেলে আসুক মিয়াকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে কাইয়ুম ও আনসার এজাহারভুক্ত আসামি।
কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক জানান, নিহত যুবকের মরদেহ সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হবে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।