১৫ আগস্ট, যথাযথ মর্যাদায় এবং শোক ও শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে প্যারিসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। শোক দিবসের এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, এম.পি. এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ডাঃ দীপু মনি এম.পি. বলেন, এ পরিকল্পিত হত্যাকান্ড শুধু যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে চেয়েছিল তা নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর বংশধর ও নিকটাত্মীয়দের ও নির্মূল করতে চেয়েছিল। এ হত্যাকান্ডের পরবর্তীকালে এ হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি, এ হত্যাকান্ডের পক্ষে সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে নানা ধরণের অপপ্রচার করা হয়। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। বাংলার মানুষকে কীভাবে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া যায় তাই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রধান লক্ষ্য। তিনি বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনে বঙ্গমাতার অবদানের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আশৈশব সঙ্গী হিসেবে বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সকল সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর কারণেই বঙ্গবন্ধু খোকা থেকে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনক হয়েছিলেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের যে চ্যালেঞ্জ গুলো রয়েছে তা মোকাবিলা নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা একদিন গঠিত হবে। মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। এছাড়া, তিনি মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেস্কোতে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের ফরাসি অনুবাদ করে প্রকাশ এবং ডাক টিকেট প্রকাশসহ দূতাবাসের অন্যান্য আয়োজনের জন্য তিনি মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
দূতাবাসের এ আয়োজনে বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সরদার ফজলুল করিমকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ঘাতকের বুলেটের আওয়াজ থেকে জন্ম নিয়েছিল লক্ষ মুজিব যা ঘাতকেরা অনুধাবন করতে পারেনি।’ বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা তা বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোক থেকে শক্তিতে রূপান্তর এবং সে কারণেই জাগরণের অগ্রযাত্রা। তিনি ফরাসী দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ আন্দ্রে মার্লোর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থনকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এবং ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহন অনুষ্ঠানে আন্দ্রে মার্লো প্রদত্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু ও নেলশন ম্যান্ডেলার অহিংস রাজনৈতিক দর্শনের মর্মকথা আস্বাদন করার সময় এসেছে। তিনি আরো বলেন,ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থাৎ জাতিসত্ত্বা এবং জাতিসত্ত্বার ভাষা বাংলা ভাষা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা, সপ্তম নয়, কারণ ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, সংস্কৃতির ও মাধ্যম। বঙ্গবন্ধুর মত ভাষাতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আর কেউ সৃষ্টি করতে পারে নি। সাংবাদিক রবার্ট ফ্রস্টকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেন, বুলেট মানুষকে ধ্বংস করতে পারে কিন্তু আত্মাকে ধ্বংস করতে পারে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে তাই ধ্বংস করা যায়নি এবং যাবে না।
শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শনের উপর আলোচনা করেন। আলোচকবৃন্দ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের আঠারো জন শাহাদাতবরণকারী সদস্যের রূহের মাগফেরাত কামনা এবং গভীর শোক প্রকাশ করেন। বক্তাগণ এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের স্বরূপ উদঘাটন এবং বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও জনমানুষের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রামের চেতনা বুকে ধারণ করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রবাসী বক্তাগণ।