প্রচারণা শেষ। আর মাত্র একদিন বাকি। বুধবার শেষ দিন প্রচার প্রচারণায় মুখরিত ছিল গোটা এলাকা। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। তরুণ, যুবক ও পৌঢ় সবার চোখে মুখে ছিল আনন্দ। সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে উপজেলা সদরে আসতে থাকে খণ্ড খণ্ড মিছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমনে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ বালাগঞ্জ এই তিন উপজেলা বর্ণিল সাজে সেজেছিল। বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। বিরামহীন এই প্রচারণা রাত ৮টায় শেষ হয়।
সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’, ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’, এ রকম নানা রঙের ব্যানার, ফেস্টুন, প্লেকার্ড ও কাঠের তৈরি নৌকা হাতে নিয়ে স্লোগানে স্নোগানে মেতে উঠেন নৌকার কর্মী ও সমর্থকরা।
ফেঞ্চুগঞ্জে দুটি মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। চন্ডীপ্রাসাদ স্কুলের সামনে একটি ও স্কুলের মাঠে ছাত্রলীগ আরও একটি মঞ্চ নির্মাণ করে। এ নিয়ে মৃদু উত্তেজনা দেখা দিলে পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে চন্ডীপ্রাসাদ স্কুলের সামনের মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়।
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), বিএনপির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী (মোটর গাড়ি) ও কংগ্রেস প্রার্থী জোনায়েদ মোহামদ মিয়া (ডাব) বুধবার সকাল ৮টা থেকে গণসংযোগ ও প্রচারণা শুরু করেন।
প্রার্থীদের শেষ দিনের প্রচারণা ছিল জমজমাট ও লোকে লোকারণ্য। গণসংযোগ ও প্রচারণার মাধ্যমে অনেকেই শোডাউন করেছেন। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক মহাসড়ক ও অলিগলি সর্বত্র ছিল সরগরম।
নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন। শেষ দিনেও ছিল উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ঝড়। প্রচারণাকালে বিশেষ করে ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ও জালালপুরে যানজটের কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
এই আসনে উপনির্বাচনের প্রচারণায় শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণের হিড়িক পড়ে যায়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন।
তবে প্রচারণার মাঠে জাতীয় পার্টি পিছিয়ে ছিল। কারণ মাত্র গত সোমবার থেকে পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে ১৩ সদেস্যের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নামে। দেরিতে কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আতিক।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচারণায় মাঠ দখল রেখেছিলেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে তারা প্রচারণায় ছিলেন।
গতকাল শেষ দিনেও বিমানে ও সড়ক পথে কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে পৌঁছেন। দলে দলে কেন্দ্রীয় নেতারা আকাশ পথে ও সড়ক পথে সিলেটে এসে প্রচারণায় যুক্ত হওয়ায় চনমনে হাবিব।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের বালাগঞ্জে শেষ নির্বাচনী জনসভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ছাত্রলীগের ভাইদের বলছি আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে হাবিব ভাইকে নির্বাচিত করুন। তিনি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী আপনাদের এলাকার উন্নয়ন করবেন।
এ সময় বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রকিব জুয়েলের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদের সঞ্চালনায় উপনির্বাচনে প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর, সাধারণ সম্পাদক বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনহার মিয়া।
পরে বিকালে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চন্ডীপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনী জনসভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ আবদুল বাছিত টুটুলের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল, সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাইয়ূম, মিসবাহ চৌধুরী, মুজিবুর রহমান ও হৃষিকেশ দেব রন্টু।
রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর বাজারে সর্বশেষ জনসভা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আহমদের পরিচালনায় এই জনসভা হয়।
এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে সিলেটে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চাই। জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি বাড়বে। ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। দেশবাসী ৪ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের দিকে থাকিয়ে আছে। তাই নির্বাচনে যাতে কেউ পেশিশক্তির প্রয়োগ করতে না পারে সে ব্যাপারে সিলেটের প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।
‘সিলেটের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে, যাতে করে ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসে। সিলেটের জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে কোনো আপস করবে না বলে আমরা আশাবাদী।’
ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে ৪ সেপ্টেম্বর লাঙ্গলের বিশাল জয় দেখবে দেশবাসী। সিলেট-৩ আসনের মানুষ দলমত নির্বিশেষে এবার আতিককে বিজয়ী করতে চান। মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন দেখতে পাচ্ছি।
দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার, সিলাম, জালালপুর, বালাগঞ্জের মোরারবাজার, আজিজপুর বাজার এবং বুধবার দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার, দাউদপুর, ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের সমর্থনে পৃথক পৃথক পথসভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সিলেট-৩ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন এবং ক্রীড়া সম্পাদক ও জাতীয় যুবসংহতির সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাজী বাবুল হোসেন, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উছমান আলী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব মইনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।