মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বোরো ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে ট্রেতে চারা উৎপাদনের ফলে খরচও কম হয়। এদিকে শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় হওয়ায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
রোববার (১৪ মে) বেলা ১১টায় উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের আয়োজনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুতগুতি এলাকায় বোরো ধানের সমলয় চাষাবাদের শস্য কর্তন ও মাঠ দিবসের উদ্বোধন করা হয়। মাঠ দিবসের এ অনুষ্ঠানে কম্বাইন্ড হারভেস্টারে শস্য কর্তন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং (পরিকল্পনা) পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মোশারফ হোসেন খান, মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন। কৃষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কৃষক রজব আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ) নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি, জেলা কৃষি প্রকৌশলী সোনিয়া শাহনিয়া জামান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সম্পাদক আব্দুল আজিজ, ইউপি সদস্য মোঃ রুশন মিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং সকল প্রযুক্তির সাথে কৃষকের মেলবন্ধন তৈরীতে কাজ করছে সরকারের কৃষি বিভাগ। আগামীর কৃষি হবে স্মার্ট কৃষি। সমলয় স্কীমের সফলতা কৃষকদের আগ্রহ তৈরীতে কাজ করবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো উপজেলার কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের গুতগুতি গ্রামে আউশ আমনের পতিত ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো (এসএল-৮ এইচ জাত) ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। এতে শ্রমিক, সার, বীজ সাশ্রয় হয়েছে। এই চাষাবাদে কৃষকদের ধানের বীজ, সার, মেশিন দিয়ে রোপণ, মেশিন দিয়ে ধান কর্তন করা হচ্ছে। ধান রোপনের শুরুর দিকে ইউনিয়নের পাশ^বর্তী ফানাই নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে ৫০ জন কৃষক প্রায় ৫০ একর জমিতে সীড শোয়িং মেশিনের মাধ্যমে ট্রেতে বোরো ধানের বীজ রোপণ করেন এবং উক্ত বীজগুলো থেকে উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে তৈরিকৃত জমিতে রোপণ করেন। ফলন হওয়ার পর কৃষি বিভাগের সহায়তায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
কৃষক রজব আলী বলেন, এ পদ্ধতি আগে কখনো দেখিনি। ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো কৃষি বিভাগের আগ্রহে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে আমাদের এলাকায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষাবাদ করেছি। আশা করি ভালো ফলন হবে। এ বছর ফলন ভালো হলে কৃষকদের আগ্রহও বাড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ ধানের উৎপাদন খরচ কমানো ও সময় সাশ্রয় হবে। সমলয় পদ্ধতিতে বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যাবে ২৫-২৮ মণ। ‘এ পদ্ধতিতে ধান চাষে কৃষকেরা লাভবান হয়। কৃষিতে বর্তমান সরকারের নানামূখী উদ্যোগে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।