মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ মোহাম্মদ আবু জাফর রাজু। সোমবার (২৯ মে) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলার উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁর কাছে এসব সমস্যা ও বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানরা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে শুনা বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে সমস্যা ও দাবি নিরসনের আশ^াস দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রটোকল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি কুলাউড়ায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি তার দায়িত্বকালীন সময়ে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে কুলাউড়ার উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে দেশ আজ সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর কারণে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভূমিহীন থেকে আজ আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন ঘর পেয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে কুলাউড়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন করে আগামীতে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে বর্তমানে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। পরবর্তীতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হবে। এছাড়া কুলাউড়ায় টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, পলিটেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ, মৎস্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন, সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি স্থাপন, ডায়বেটিস হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণ, আই ভিশন সেন্টার স্থাপন, উপজেলা যুুব প্রশিক্ষণ ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। মানুষের পানির সমস্যা নিরসনের জন্য তাঁর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় এক হাজারটি টিউবওয়েল বরাদ্দ হয়েছে। তিনি শিক্ষাখাতের উন্নয়ন নিয়ে বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন, এছাড়া ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ টাকা করে ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে মেরামতের জন্য। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন, ৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ টাকা করে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ এবং ৭টি বিদ্যালয়ে ৭ লক্ষ করে ৪৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫টি বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ করে ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে ২৪টি বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন তিনি বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কুলাউড়ায় ১৯৩টি রাস্তা পাকাকরনে অনুমোদন হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৫৭টি রাস্তা অনুমোদন হয়েছে। তন্মধ্যে ২৩টি রাস্তা পাকাকরণ কাজের টেন্ডার হয়েছে। কুলাউড়া শহরের প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে শহরের প্রধান রাস্তাকে ফোরলেনে উন্নীত করে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলীর পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাও. ফজলুল হক খান সাহেদ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিঠুন সরকার, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সোনা মোহন বিশ্বাস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইফতেখায়ের হোসেন ভুঁইয়া, সিনিয়র সাংবাদিক এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম এম নাজমুল হক তারেক, বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর মুহিব উল্ল্যাহ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. মহসিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম বদর, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখই, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ শাকিল প্রমুখ। এসময় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া কুলাউড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের সমস্যা ও দাবি দাওয়া তুলে ধরে আরও বক্তব্য রাখেন ব্রাহ্মণবাজার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মমদুদ হোসেন, কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান, হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখস, ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, জয়চন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব, শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক, কুলাউড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান, কর্মধা ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ। তাঁরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও কুলাউড়ায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। অভিভাবকহীন কুলাউড়ায় সরকার দলীয় একজন সাংসদ থাকলে কুলাউড়া আজ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতো না। কুলাউড়ায় এখন উন্নয়নের যানজট লেগেছে। সেই যানজট থেকে নিরসনের জন্য কুলাউড়ায় সরকার দলীয় একজন সাংসদের খুবই প্রয়োজন। সেই দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি জনপ্রতিনিধি না হয়েও কুলাউড়ার মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে তিনি কুলাউড়ায় গত ৪ বছরে অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাঁর মাধ্যমে বর্তমানে কুলাউড়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর মাধ্যমে অনুমোদন হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী না থাকায় প্রাক্ষলন তৈরি করে না পাঠানোর কারণে অনেক প্রকল্প ঝুঁলে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজুর কাছে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের ইউনিয়নে ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়নে বরাদ্দ এনে দেয়ার জন্য দাবি তুলেন।