নদীর এক পাশে ভারত। আরেক পাশে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটির শুধু দত্তগ্রামে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। বিএসএফের বাধায় বাকি তিনটি স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি স্থানের তীর সংরক্ষণের কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাধা দেওয়ায় কাজ করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বাঁধের কাজ বন্ধ থাকায় আগামী বর্ষায় নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয় লোকজন। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এবং নদীতীরের কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০১৮ সালে মনু নদীর কারণে বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার পুরো শরীফপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর হারিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ সময় চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনোটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, মনু নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষায় স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নেওয়া হয়।
৯৯৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২১ জুন একনেকে অনুমোদন হয়। এতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল, বাগজুরসহ চারটি স্থানে মোট দুই কিলোমিটার ২০০ মিটার অংশে স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ কাজও রয়েছে। ওই কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।
চারটি স্থানের বাংলাদেশ অংশের বাঁধে মোট পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩২টি সিসি ব্লক নির্মাণ, এক লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭টি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ ও বাঁধ পুনর্বাসন কাজ রয়েছে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথমবার নদীতে জিও ব্যাগ ফেলতে চাইলে বিএসএফ তাদের বাধা দেয়। এরপর একাধিকবার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলতে গেলে বিএসএফের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ কারণে ১৩ জানুয়ারি থেকে কাজ পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকে বসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিএসএফের মৌখিক সম্মতির পর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শুধু দত্তগ্রামে কাজ শুরু করতে পারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর এলাকায় কাজ এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে।
চলতি মাসের ৩০ জুন পুরো কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল। পরে পাউবো আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময় বাড়ায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন জানান, তাঁরা জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক তৈরি করে প্রায় দেড় বছর ধরে বসে আছেন। একাধিকবার কাজের চেষ্টা করেও বিএসএফের বাধায় তিনটি স্থানে কাজ করতে পারছেন না।
পাউবোর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, গত ৭ মার্চ যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ থেকে ভারতের নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে একটি ডিও পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকি তিনটি স্থানে স্থায়ী নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভারত থেকে অনুমোদন প্রয়োজন।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের চারটি স্থানের মধ্যে তিনটি স্থানে প্রতিরক্ষাকাজ দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে বিএসএফের বাধার কারণে। এই কাজ যথাসময়ে না করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে চাতলা ব্রিজ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকা দিয়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তখন শরীফপুর ইউনিয়নসহ হাজীপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জের পতনউষা ও রাজনগরের কামারচক ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা বন্ধ থাকা কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’