সত্তর দশকে দুই-একজন আসলেও বাংলাদেশি হিসেবে জার্মানিতে আসা শুরুটা হয়েছিল ১৯৭১ সালের পর। যখন প্রথম বাংলাদেশিরা এখানে আসে, তখন নাকি একজন জার্মান ভাষা না জানার কারণে (মুরগিকে কি বলে জানতো না) সুপার শপে মুরগি খুঁজতে গিয়ে পেল না, অনেক খোঁজার পর ডিম পেল।
সত্তরের শুরুতে যারা এসেছিলেন তারা পড়াশুনা করতে এসেছিলেন। পড়াশুনা শেষে বেশির ভাগই চলে গিয়েছিলেন। কারণ পড়াশুনা শেষে চাকরি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ বা আইন ছিল না। দুই-একজন জার্মানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঘর বেঁধেছিলেন।
বর্তমানে পড়াশুনা শেষে ১৮ মাস সময় পাওয়া যায় চাকরি খোঁজার। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়েও আসা যায়; অনেক ক্ষেত্রে ছয় মাসের থাকা খাওয়ার খরচ সঙ্গে নিয়ে এসে চাকরি খোঁজা যায়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা মিনিমাম ব্যাচেলর ও ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় পারদর্শী হতে হবে। জার্মানির মতো এই আধুনিক যুগেও ৬.২ মিলিয়ন জার্মান নাগরিক জার্মান পড়তে ও লিখতে পারে না। সর্বমোট জনসংখ্যা আট কোটি ত্রিশ লাখ । ১৯৭১ সালের পর যারা এসেছেন তারা বেশির ভাগ রাজনৈতিক আশ্রয়ধারী হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন তাদের কেউ কেউ।
১৯৭৫ সালের পর ১৯৮০ পর্যন্ত যারা এসেছিলেন তারা আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার সপক্ষের বাংলাদেশি। এরা কেউ কেউ বিয়ে করে, আবার অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে এখানে স্থায়ীভাবে থেকে গেছেন।
এ সময় আসা লুৎফর রহমান খান জানান, তখন তারা বেশিরভাগ খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। লুৎফর রহমান খান বর্তমানে বার্লিনে থাকেন, বয়স ৬৫ প্লাস। আমি নিজেও জার্মানিতে খবরের কাগজ বিলি করার কাজ করেছি। একদিন কাজ করে সাত দিন জ্বরে ভুগেছি ।
একদিনে বেতন পেয়েছিলাম ৪০ মার্ক (তৎকালীন কারেন্সি)। টাকায় কত ছিল মনে নাই। খবরের কাগজ বিলির কাজ ছিল ঐদিনই প্রথম, ঐদিনই শেষ। সময়টা ছিল ১৯৯৬। তবে বাংলাদেশিরা সৎ ও পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। আশির দশকে যারা আসেন তারা ভাগ্য পরিবর্তন বা উন্নত জীবনের জন্য আসেন ও বসতি গড়েন বহু চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে। ৯০-এর দশকেও একই অবস্থা ছিল। ২০০০ সাল থেকে আসার সুযোগ পায় বা আসে পড়তে। আমাদের পরিচিতি পাল্টে যায়।
এর আগে রেস্তোরাঁ শ্রমিক বা আনইসকিল লেবার হিসেবে ছিলাম। পরিচিতি পায় শিক্ষিত পেশাজীবী হিসেবে। অবশ্য আনইসকিল লেবার হিসেবে কাজ শুরুর পেছনে কারণও ছিল। ধারদেনা করে বিদেশে এসে পেছনে ফেলে আসা আপনজনকে অর্থনৈতিকভাবে ভালো রাখার জন্য যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন। তবে এখন সেই অবস্থা নেই।