মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদের নির্দেশে স্থানীয় মুরইছড়া বাজারের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকলীগ নেতা মোঃ লায়েক মিয়াকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা ও হুমকি ধামকীর অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী লায়েক মিয়া ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে কুলাউড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী লায়েক মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদসহ ৯জনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দেন। লায়েক কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়ার বাসিন্দা মাসুক মিয়ার ছেলে ও কর্মধা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লায়েক মিয়া জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বেলা আনুমানিক দুইটায় কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার রতল লাল, প্রদীপ, বালি রায়, অনুকুল মুরইছড়া বাজারস্থ আমার রেষ্টুরেন্টে এসে আমাকে বলে তাদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ তাদেরকে পাঠিয়েছেন। এসময় আমি তাদের কাছে জানতে চাই কেন আমাকে ইউপি কার্যালয়ে যেতে হবে। কিছুক্ষণের পর ইউনিয়নের কালেক্টর ছালেক মিয়া, সোহাগ মিয়া, দুধু মিয়া, চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কায়েছ আমার রেষ্টুরেন্টে এসে ইউনিয়ন অফিসে যাওয়ার কথা বলেন। তাদেরকে জানাই আমি চেয়ারম্যানের সাথে পরে দেখা করবো। আমার এ কথা শুনে ইউনিয়নের কালেক্টর ছালেক মিয়া ও ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কায়েছ হুংকার দিয়ে বলেন এখনই তাদের সাথে ইউনিয়ন অফিসে যেতে হবে এটা চেয়ারম্যান সাহেবের কড়া নির্দেশ। তা না হলে তারা আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাবে। এরপর পরিষদের মেম্বার কাদির মিয়া, মোশাহিদ মিয়া, মতিন মিয়া, হেলাল মিয়া, দরছ মিয়া, লছমী নারায়ন অলমিকসহ আরও ৩০/৪০ জন লোক চলে আসেন আমার রেষ্টুরেন্টের সামনে। তারা সবাই মিলে আমাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে বাজারের লোকজন ও ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বিষয়টি দেখে আমার রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে বিবাদীদের বাঁধা আপত্তি দিয়ে সরিয়ে দেন। যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষরা হুমকি দিয়ে বলে যান, সুযোগ মত আমাকে তারা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে উচিত শিক্ষা দিবে।
লায়েক আরো বলেন, চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদের সাথে নির্বাচনী বিরোধ ছাড়া আমার আর কোন বিরোধ নেই। বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিকের পক্ষে কাজ করেছিলাম। সেই আক্রোশ থেকে চেয়ারম্যান সাহেব ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বড় ধরণের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় থেকে এসব কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও হুকুমে ওই ঘটনার পর থেকে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। তাই নিরুপায় হয়ে চেয়ারম্যানসহ ৯জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, লায়েকের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের বিষয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য তার বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে লোক পাঠাই ইউনিয়ন পরিষদে আসার জন্য। কিন্ত সে ওই লোকদের সাথে খারাপ আচরণ করে বলে চেয়ারম্যানের কোন দরকার থাকলে তার সাথে গিয়ে দেখা করতে। পরে ঘটনার দিন আমি পরিষদ থেকে কয়েকজন দফাদারকে পাঠাই তাকে আসার জন্য কিন্ত সে আসেনি। পরবর্তীতে পরিষদের সাতজন সদস্যকে পাঠাই এরপরও সে আসেনি। এছাড়া গত নির্বাচনের আগ থেকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে ফেসবুকে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করে। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। জেলা প্রশাসক বরাবরে দেয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমাকে হুয়রানি করার জন্য এই অভিযোগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের দুই বছর হয়ে গেল। দুই বছর পর কেন বিরোধ মিটাতে যাবো। লায়েক কি একা আমার বিরোধীতা করেছিল। আরো অনেকেই বিরোধীতা করেছে।