রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
জিসাস কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কায়ছল ইসলামের সাথে জুড়ী উপজেলা নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময় কুলাউড়ায় কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেন হেলাল আহমদ জিসাস কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কায়ছল ইসলামের সাথে জুড়ী উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের শুভেচ্ছা বিনিময় জিসাস কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারন সম্পাদক কায়ছল ইসলামের সাথে জুড়ী উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের শুভেচ্ছা বিনিময় ভারতকে উদ্দেশ্য করে জামায়াত আমির – সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন কিন্তু নিজের চেহারা একবার আয়নাতে ভালোভাবে দেখুন কুলাউড়ায় জামায়াতের প্রচার মিছিল অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় বোরো ধানের সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর উদ্বোধন  ড. ইউনূসের নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাল যুক্তরাষ্ট্র কুলাউড়ায় ছাত্রদল নেতা সিপার আহমদের ৩য় মৃত্যবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল রাজনীতি’কে পুঁজি করে কোটিপতি হলেন কুলাউড়া আ.লীগের সভাপতি রেনু

কুলাউড়ায় নিষেধাজ্ঞার ১৫ বছর পর ঝিমাই বাগানের রাস্তায় গাড়ি চলাচল শুরু, স্বস্তিতে পুঞ্জির লোকজন

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দীর্ঘ ১৫বছর পর ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির লোকদের গাড়ি চলাচলের রাস্তা উন্মুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে বাগান কর্তৃপক্ষ ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ওই চলাচলের রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময়ের ভিতরে বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা দিয়ে পুঞ্জির লোকজন গাড়ি দিয়ে চলাচল করতে পারবে।

সম্প্রতি ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং পুঞ্জির লোকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহি উদ্দিন ও সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের সাথে সাক্ষাৎ করে ঝিমাই চা-বাগান কর্তৃক রাস্তায় গাড়ি চলাচলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনা করেন। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদনানের নেতৃত্বে সেনা সদস্যের একটি দল ঝিমাই চা-বাগান ও ঝিমাই পুঞ্জি পরিদর্শন করেন।

জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ঝিমাই পুঞ্জির লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গাড়ী নিয়ে চলাচল করতে পারতো না ঝিমাই চা-বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা দিয়ে। বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই রাস্তার মধ্যখানে ফটক দিয়ে রাখে এবং সর্বসাধারণের গাড়ি নিয়ে চলাচল বন্ধ রাখে। সেই ফটক দিয়ে পুঞ্জির লোকজন, শিক্ষার্থীরা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। যার কারণে ওই ফটক থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাদের পুঞ্জিতে যাতায়াত করতে হত। ইতিমধ্যে রাস্তা চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ খাসিয়াদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঝিমাই পুঞ্জিতে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এরআগেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, ড. মিজানুর রহমানসহ দেশের সুশীল সমাজের অনেকেই পরিদর্শনে আসেন। তারা পুঞ্জির লোকদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে কথা বলেন।

ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং বলেন, ঝিমাই পুঞ্জিতে বংশপরম্পরায় আমরা বসবাস করছি। জীবিকার একমাত্র মাধ্যম পান চাষ করে আমাদের সংসার চলে। প্রায় ৮০টি পরিবারে অন্তত ৪ শতাধিক মানুষের বসবাস এই পুঞ্জিতে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঞ্জির লোকজন গাড়ি নিয়ে চলাচলে অনেক ভোগান্তিতে ছিল। যার কারণে পুঞ্জি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে বাগানের ফটক থেকে পায়ে হেঁটে পুঞ্জিতে আসতে হয়। এছাড়া আমাদের পুঞ্জি থেকে অনেক পান ব্যবসায়ীরা পান পরিবহন করতে বাড়তি খরচসহ অনেক কষ্ট করতে হত। চলমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানালে তাদের হস্তক্ষেপে চলাচলের রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক আবেদন জানাচ্ছি যে, আমাদের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরো কিছু সময় দিলে আমরা পুঞ্জিবাসী অনেক উপকৃত হবো।

ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে আসা পান ব্যবসায়ী সুধাংশু দাস ও কুলাউড়ার মনসুর গ্রামের আব্দুল মন্নান বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঝিমাই পুঞ্জি থেকে পান ক্রয় করে ব্যবসা করে আসছি। গত ১৫ বছর ধরে বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তায় ফটকে বাঁধা থাকার কারণে পান পরিবহন করতে খুবই কষ্ট হতো। নির্দিষ্ট সময়ের আগে পান বাজারে সরবরাহ না করার কারণে অনেক সময় আমাদের পান নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে রাস্তায় গাড়ি চলাচল উন্মুক্ত করায় আমরা পান ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। বাগান কর্তৃক যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো কিছুটা সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

ঝিমাই চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা পুঞ্জির লোকদের বলেছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাগানের রাস্তা দিয়ে তারা শুধুমাত্র পান পরিবহনের জন্য একটি গাড়ি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। আর সকালে তাদের চলাচলের জন্য রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে সন্ধ্যার পর বাগানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গাড়ি চলাচলে বাগানের নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেড ১৯৬৮ সালে ৬৬১.৫৫ একর বিশিষ্ট ঝিমাই চা-বাগানটি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেয়। বন্দোবস্ত নেওয়ার পর ৩১০ একর ভূমিতে চা-গাছ লাগানো হয়েছে। বাকি ভূমির মধ্যে প্রায় ৫ একরে রয়েছে বাগানের অফিস, ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে। আগামী ২০৫২ সাল পর্যন্ত বাগানটি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া। প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন করসহ সরকারকে সকল রাজস্ব দিয়ে আসছে বাগান কর্তৃপক্ষ। বাগানের লিজ নেওয়া ৩৭১ একর ভূমি দখল করে খাসিয়ারা পরিবার পান চাষ ও বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পুঞ্জির লোকদের সাথে বাগানের সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। এরপর বাগান সম্প্রসারণ করতে গেলে পুঞ্জির লোকজন বাঁধা দিলে বাগানের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মহিউদ্দিন বলেন, আমরা ঝিমাই চা বাগান ও পুঞ্জির লোকদের সাথে কথা বলার পর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়েছে। যার ফলে এখন থেকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বাগানের অভ্যন্তরের ফটকটি খুলে দেওয়া হলো। আশা করছি আর কোন সমস্যা তৈরি হবেনা।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ | কেবিসি নিউজ ফ্রান্স
Theme Developed BY NewsFresh