মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নে শতবর্ষী দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে বাঁধা, ভূয়া দলিল দিয়ে মসজিদের জমি দখল ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনুর জামাতা ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এস জামানের বিরুদ্ধে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাঁর কবল থেকে মসজিদের জমি উদ্ধার ও বিচারের দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদের সম্মুখে মানববন্ধনে এলাকার শত শত লোকজ অংশগ্রহণ করে আওয়ামীলীগের সভাপতির দাপটে জামাতা জামানের মসজিদ নিয়ে কূটকৌশল এবং মসজিদের টাকা আত্মসাতের প্রতিকার চেয়ে মসজিদ সম্প্রসারণের দাবি জানান।
মানববন্ধনে মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী শামছুল আরেফীন কামাল, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম সিকন, মুসল্লী ইউসুফ মিয়া, মফিজ মিয়া, জাহিদুল আরেফীন সুমেল প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্য মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী শামছুল আরেফীন কামাল বলেন, প্রায় শত বছর আগে দক্ষিণ ভাটগাঁও মসজিদটি নির্মাণ করা হয় এবং গ্রামের মুসল্লীগণ নামাজ আদায় করতেন। বিগত ১৯৫৬ইং সনের এস.এ জরিপে ৯৪০নং খতিয়ানের ৪৯৩২ নং দাগের ৩ শতক ভূমি দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদের নামে রেকর্ড হয়। এস.এ জরিপের বহুপূর্বে ৯৪০নং খতিয়ানের মালিকগণের পূর্ববর্তীগণ ৩ শতক ভূমি মসজিদ বরাবরে দান করেন এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্ণিত ভূমিতে পাকা টিনের মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদ নির্মাণের পর মুসল্লিদের ওযু করার জন্য কোন পুকুর ছিলনা। মসজিদের লগ্ন দক্ষিণাংশে মবই নামে এক ব্যক্তি ২ শতক জমি বিনা শর্তে পুকুরের জন্য দান করেন। ওই পুকুরে দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর যাবৎ মুসল্লিরা পুকুর হিসাবে ওযু করে আসছেন।
বর্তমান আরএস জরিপ শুরুর পূর্বে মবই মিয়ার ভাতিজা আব্দুস শুকুর ওরফে রওয়াব উল্ল্যা এবং তার চাচাতো ভাই আবুল মিয়া গং উক্ত মসজিদের পুকুর নিজেদের মালিকানা দাবি করে তাদের পূর্ববর্তী কর্তৃক দান সংক্রান্ত বিষয় অস্বীকার করে গ্রামের মুসল্লীদের আপত্তির মুখে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে যায়। পরে এলাকার লোক প্রতিবাদ করলে বিরোধ দেখা দেয়। উক্ত বিষয় নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে বর্ণিত পুকুরের জমি মসজিদ বরাবরে দানপত্র দলিলমূলে হস্তান্তরের জন্য আব্দুস শুকুর গংকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
মসজিদের নামে সকল রেকর্ডীয় কাগজপত্র থাকার পরও শুধুমাত্র শশুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি থাকার কারণে ৩ শতক ভূমি ভাতাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এম এস জামান ওরফে কামাল তাঁর পিতা আব্দুস শুকুরসহ ২০ জনের নামে বিগত ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারী কুলাউড়া সাবরেজিস্ট্রারী কার্যালয়ে ১৪৪/২২নং দানপত্র ভূয়া দলিল সম্পাদন করেন। ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়, উক্ত দলিলের দাতা কিংবা দাতাগণের ওয়ারিশানের মধ্যে হতে আজীবন উক্ত মসজিদের মোতাওয়াল্লী থেকে উক্ত মসজিদ পরিচালনা করবেন। ওই স্বার্থ হাসিলের জন্যই ওই ভূয়া দলিলের সৃষ্টি করা হয়।
ভূয়া দলিল করার পর গ্রামের মুসল্লীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এবং উক্ত দানপত্র দলিল বাতিলের জন্য বিজ্ঞ আদালতে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও গ্রামবাসী বাদি হয়ে স্বত্ত্ব মামলা নং ৭৫/২২ দায়ের করেন। এদিকে মসজিদ কমিটি ও মুসল্লীরা ভূয়া দলিলে উল্লেখিত জামান গংসহ সকল দাতাকে অভিযুক্ত করে ফৌজদারী ধারায় আদালতে আরেকটি মামলা (নং-২৪৭/২২) দায়ের করেন। ওই মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে মসজিদ কমিটির পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য শামছুল আরেফিন কামালের চাচা এড. বদরুল ইসলামের মধ্যস্থতায় মাসুক মিয়াকে সভাপতি ও এম এস জামানকে সেক্রেটারি করে কমিটি গঠন করা হয়। ৪ বছর কমিটির কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলে। ওই সময় দেশ-বিদেশের লোকজন মসজিদ সম্প্রসারণ করার জন্য প্রায় ১০-১২ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। কিন্তু ওই সময় মাসুক মিয়া ও এম এস জামান মসজিদ সম্প্রসারণে কোন ভূমিকা না নেওয়ায় দুজনকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেন এলাকার লোকজন ও মুসল্লী। পরবর্তীতে ২০২০ সালে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাককে সভাপতি ও শামছুল আরেফীনকে সেক্রেটারী, নুরুল ইসলাম সিকনকে সহ-সভাপতি ও রিয়াজ উল্লাকে কোষাধ্যক্ষ করে কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠনের পূর্বে অগ্রণী ব্যাংক রবিরবাজার শাখায় মসজিদের নামে একাউন্ট খোলা হয়। মসজিদের বৈধ কমিটি এবং মুসল্লীদের না জানিয়ে গোপনে অবৈধ ফায়দা হাসিলের জন্য এমএস জামান মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য একাউন্ট হোল্ডারের নাম পরিবর্তন করে তাকে (এম এস জামান) সভাপতি, রমজান আলীকে সহ-সভাপতি ও সৈয়দ কায়েদ মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ করে একাউন্টে নাম সংযোজন করে ৫-৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এরপর বিষয়টি জেনে মসজিদের মুসল্লী ও এলাকার লোকজন অগ্রণী ব্যাংক রবিরবাজার শাখায় দক্ষিণ ভাটগাঁও জামে মসজিদের নামীয় হিসাব নং- ০২০০০১৫৩৮২০৬৪ এ জমাকৃত টাকা উত্তোলনে স্থগিত করতে স্টপ পেমেন্টর জন্য আবেদন করেন।
বর্তমানে এই চক্রটি মসজিদকে নতুন করে নির্মাণ বা সম্প্রসারণ না করতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় এলাকায় দুইপক্ষের বিরোধ এখন তুঙ্গে। যেকোন সময় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এম এস জামান বাহিনী ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে মসজিদ দখলের চেষ্টা বার বার চালিয়ে যাচ্ছে এবং এলাকার নিরীহ লোকদের মামলা-মোকদ্দমার হুমকি দিয়ে আসছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক এম এস জামান তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মসজিদ সম্প্রসারণ কাজ করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। মসজিদের পাশের জমি আমাদের রেকর্ডীয়। আমার শশুরের কোন প্রভাব খাটিয়ে দলিল করা হয়নি। দলিল দাতারা স্থানীয় মুসল্লীদের সাথে আলোচনাক্রমে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন। তিনি আরো বলেন, একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে দুই পক্ষের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মরণলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ফৌজধারী মামলা প্রত্যাহার করে মসজিদ সম্প্রসারণ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিল কিন্তু কামাল গং সেটি মানেননি।