মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের বন্ধ থাকা কাজ ফের শুরু হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে প্রকল্প এলাকা ঘুরে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন।
এরআগে রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কের কাজে শরীফপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় প্রায় শতাধিক লোক জমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় জমির মালিকরা কাজে বাঁধা দেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন।
এসময় তিনি শরীফপুর ইউনিয়নের ইটারঘাট এলাকায় স্থানীয় উপকারভোগীদের সাথে আলোচনা করে জমির প্রকৃত মালিকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের আশ্বাস দেন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়ছার হামিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহুরুল হোসেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য লাল মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য হারুন আহমদসহ স্থানীয় উপকারভোগীরা।
সওজ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়ন পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২ শত ৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও জমি অধিগ্রহণ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। ৩৪ কোটি টাকায় ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হয়।
কিন্তু সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়াতে সেতু দিয়ে যান চলাচল এখনো শুরু হয়নি।
স্থানীয় লোকজন সেতুর দুই পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা এপ্রোচ সড়ক ব্যবহার করে দুর্ভোগ মাড়িয়ে কোনমতে চলাচল করছেন। এ প্রকল্পের মেয়াদে প্রায় সাড়ে ৪ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এদিকে ২০২০ সালে কার্যাদেশ পাওয়া প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় ‘মেসার্স মোঃ জামিল ইকবাল’ নামের সিলেটের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা থাকায় পরবর্তীতে দুই দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানা হয়।
রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য বালু পরিবহনে বর্তমান বালু ইজারাদারের বাঁধা ও ভূমি অধিগ্রহণে টাকা না পাওয়ায় শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর এলাকায় স্থানীয় লোকদের বাঁধার কারণে কাজ থমকে গিয়েছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দেন পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের লোকজন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়ছার হামিদ বলেন, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে বিভিন্ন জটিলতা ও স্থানীয় চাতলাপুর এলাকায় উপকারভোগীরা অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় বাঁধা দেয়ার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হস্তক্ষেপে স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা কাজে কোন বাঁধা দিবেনা বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তাই শুক্রবার থেকে দ্রুত গতিতে বৃহৎ এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, সংযোগ সড়কের কাজে স্থানীয় লোকদের বাঁধার খবর শোনার পর জেলা প্রশাসক স্যার সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা যারা পায়নি সেইসকল জমির মালিকদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দেন।
তখন জমির মালিকরা জেলা প্রশাসক স্যারের বক্তব্য শুনে আশ্বস্ত হন এবং সংযোগ সড়কের কাজে আর কোন বাঁধা দিবেননা বলে প্রতিশ্রুতি দেন। উপকারভোগীদের জমির সঠিক কাগজাদি দিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবরে লিখিত আবেদন দ্রুত জমা দেবার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, চাতলাপুর এলাকায় মনোহরপুর মৌজায় অনেক লোকের ভোগকৃত জমি সরকারি ভিপি সম্পত্তি ক ও খ তফশিল হিসেবে পাওয়া যায়।
তন্মধ্যে ক তফশিলে যাদের জমির মালিকানা নিয়ে আদালতের রায় থাকবে তাদেরকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে এবং খ তফশিলে যাদের জমি থাকবে তারা জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করার পর জেলা প্রশাসক স্যার বিজ্ঞ সরকারী কৌসুলীর সঙ্গে আলোচনা করার পর জমির মালিকানা যাচাইপূর্বক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
Related