রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
কুলাউড়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মহিবুর রহমান ময়ুব স্বরনে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবকদল বড়লেখায় উৎসব মুখর পরিবেশে শিবিরের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্টেপ এ্যাহেড বাংলাদেশের ঔষধ সামগ্রী হস্তান্তর কুলাউড়ায় শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন ৫ আগস্ট আমরা আরেকবার স্বাধীন হয়েছি : এম নাসের রহমান সাবেক দুই আইজিপি আটক কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী কিশোরীর মৃত্যু ক্ষমতায় গেলে গুম রোধে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী আইন করবে বিএনপি বায়ু দূষণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে, মানুষের আয়ু কমেছে প্রায় ৫ বছর

মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই: কাজী এনায়েত উল্লাহ

কাজী এনায়েত উল্লাহ
  • আপডেট : রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

ফরাসি পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে না না জল্পনা কল্পনা চলছে। অনেকেরই ধারনা যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোনই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত যাচায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তার সম্ভাবনা নিতান্তই কম । প্রেসিডেন্ট মাক্রোন মুলতঃ ক্ষমতায় এসেছিলেন একটা বিশেষ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া হলেন্ডের দূর্বল শাষনামল এবং তিনি তার সময় উত্তীর্ণ হবার পর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহনের ব্যাপারে অনিহা প্রকাশ করায় ফরাসি ইতিহাসের সবচেয়ে তরুন এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এমানুয়েল মাক্রোন প্রেসিডন্ট নির্বচনে অংশ গ্রহন করার সূযোগ গ্রহন করেন।

বস্তুতঃ মাক্রোন একজন টেকনোক্র্যাট, এবং বিশ্বখ্যাত রথচাইল্ড অর্থনৈতিক গ্রুপের একজন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তাতে প্রথমেই ইয়োলো জ্যাকেট আন্দলনের মোকাবিলা করতে হয়। ফরাসিদের এক বিরাট অংশ এই আন্দোলনের মাধ্যমে মাক্রোনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বেশ কয়েকটি মৌলিক রিফর্মের বিরোধিতায় পুরো ফ্রান্স জুড়ে এই গন আন্দোলন শুরু করে যা পরবর্তীতে অনেকটা হিংসাত্মক রুপ ধারন করে। কট্টর বাম পন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকারকে বাধ্যকরে তাদের কার্যক্রম থেকে সরে আসতে। তারপর করোনা সংকট, দুবছরের অধিক সময় সরকারকে নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যা সবক্ষেত্রেই জনপ্রিয় ছিলোনা। বিশ্বব্যাপি এই মহামারী সমগ্র মানব সমাজকে তার অস্তিত্বের ব্যাপারে দ্বিধা বিভক্ত করেছে, ভ্যাক্সিনের পক্ষে বা বিপক্ষে। অর্থনৈতিক অচলাবস্থাতো আছেই।
তারপরও ফরাসিদের মধ্যে অন্য তেমন যোগ্য দেশ চালনার কোন ব্যাক্তিত্য না থাকায় মাক্রোনকেই বেছে নিয়ে ছিলো আগামি পাঁচ বছরের জন্য, অন্তত জনমত যাচাইয়ে তা ই মনে হচ্ছিলো। বামপন্থি দলগুলোর শোচনীয় অবস্থা, তাদের মধ্যে কোন গ্রহনযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ব্যর্থতার কারনে নির্বাচনে তাদের অবস্থান খুবই শোচনীয়। কট্টর ডানপন্থি দলগুলো ফরাসি জনগনের এক বিরাট অংশে নানা বহিরাগতদের কারনেই আজ ফ্রান্সের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কথাটা বোঝাতে সক্ষম হওয়ার কারনে তাদের অবস্থান আজ অনেক শক্তিশালী। বিশষতঃ দুই নেতৃত্ব যথাক্রমে মারিন লোপেন আর এরিক জেমুর আজ জনপ্রিয়তায় বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছেন।

কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমস্ত রাজনৈতিক পর্যালোচনাকে উলট পালট করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাক্রোন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একচেটিয়া ইউক্রেনকে সমর্থনের ব্যাপারটা তারা গ্রহন করতে পারেনি। পশ্চিমা বিশ্ব, মার্কিন যুক্ত রাস্ট্র এবং ন্যাটোর শর্তহীন ইউক্রেনকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগীতার বিপরীতে ফরাসি জনমত। যদিও সমস্ত ফরাসি মিডিয়াগুলো সর্বক্ষন রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারনায় ব্যস্ত এবং ইউক্রেনেকে রাশিয়ার আগ্রাসনের স্বিকার বলে অবিহিত করছে। প্রকৃত কারন বা বাস্তবতাকে তারা গুরুত্ব দেয়না।

স্বাধীনচেতা ফরাসিরা ১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনেরাল দ্য গলের নেতৃত্বে মার্কিন সংগঠন ন্যাটো থেকে বেড়িয়ে এসে এক স্বাধীন নিউক্লিয়ার ডিসিউশনের কার্যক্রম শুরু করেন এবং সামরিক ক্ষেত্রে আত্ব নির্ভরশীল নীতির অবলম্বন করেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি ২০০৮ সালে এক অজানা কারনে পুনরায় ন্যাটোতে ফ্রান্সকে যোগদানের সিদ্ধান্তে নেন। এরই এক নিরব প্রতিক্রিয়া আজ দৃশ্যমান, যেখানে প্রেসিডন্ট মাক্রোন জনমত যাচায়ে ৩৫% জনগনের আস্থার পাত্র ছিলেন কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ৪২ দিন পর তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ২৬,৫০ ভাগে। অপরদিকে কট্টর ডানপন্থি মারিন লোপেনের জনপ্রিয়তা বেড়ে হয়েছে ১৫% থেকে ২৫% ভাগে।এখানে উল্লেখযোগ্য যে ২০১৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনের কাছ থেকে নির্বচনী খরচ বাবৎ লোন নিয়েছিলেন তিরিশ মিলিয়ন ইউরো। এবারের নির্বাচনী প্রচারনায় ও তিনি রাশিয়ার প্রতি ইউরোপের নানা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ।

ফরাসি গনতন্ত্রের বিশেষতঃ হচ্ছে, নির্বাচনগুলো পরিচালিত হয় দুই রাউন্ডে, প্রেসিডন্ট নির্বচনের প্রার্থীকে তার গ্রহনযোগ্যতা প্রমান করতে হলে অবশ্যই ৫০০ জন নির্বাচিত জন প্রতিনীধির সাক্ষরদেয়া অনুমোদনপত্র জমা দিতে হবে। এটা অবশ্য মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তারপর একটা নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্ত্বিতে নির্বাচনী প্রচারনা এবং খরচ করতে হবে। নির্বাচনী খরচ শর্তসাপেক্ষে সরকার পরিশোধ করে যাতে টাকার জোড়ে কেউ নির্বাচনী প্রচারনা করতে না পারে। শতকরা পঞ্চশ ভাগের অধিক ভোট প্রাপ্ত প্রার্থীকে সরাসরি জয়ী বলে ঘোষনা করা হয়। অন্যদিকে তার নীচে হলে পনেরদিন পর দ্বিতীয় রাউন্ডে মোকাবিলা করতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের সঙ্গে অন্যান্য দলগুলো আলোচনার করে কোয়ালিশন করার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার জন্য।

এবারের নির্বাচনে ১২ জন প্রার্থী, তবে বিশেষতঃ হচ্ছে, এদের ডান বা বামপন্থিদের মোট হিসাব করলে দেখা যায় ৪৫ ডান এবং ২৮.৫০ বামপন্থি প্রতিদন্দ্বী, এবং মধ্যপন্থি মাক্রোন পেতে পারেন ২৬.৫০, জনমত যাচায়ে এটাই হচ্ছে আজকের প্রতিচ্ছবি। উল্লেখ করা যায় যে পনের বছর ফ্রান্স শাষন করা প্রেসিডেন্ট মিতেরাঁর এবং পাঁচ বছর শাষন করা প্রেসিডেন্ট হল্যান্ডের সোসালিস্ট পার্টির অবস্থা খুবই করুন। অন্যদিকে ঐতিহাসিক দ্য গল, সিরাক আর সারকোজির ক্লাসিক ডান দলের ও একই অবস্থা। কথা হচ্চে দিতীয় রাউন্ডের কোয়ালিশন আলোচনায় বাম, ডান কোন পক্ষের শক্তি কি হতে পারে? আরো নির্ভর করছে কতো ভাগ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন? এবং কতভাগ ভোটার তার নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন ? এবারের নির্বাচনে কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট তা অনেকটাই অনিশ্চিত। কোন কিছুই বলা যাবেনা, যেমন প্রখ্যাত ফরাসি ব্যাক্তিত্ব জ্যাক আতালি বলেছেন “ এবারের নির্বাচনে প্রথম বারের মতো একজন মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বচিত হবেন কট্টর জাতীয়তাবাদি দলের একজন ঐতিহাসিক নেত্রী। যদি তাই হয়? তাহলে আশ্চর্য্য হবার কিছু থাকবেনা। তবে যদি বাংলাদেশ বা ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে বলতে হয়, তাহলে মাক্রোনই উপযুক্ত ব্যাক্তি যার সঙ্গে আমাদের সরকার এবং ব্যাবসায়ীদের একটা অব্যাহত সম্পর্ক রয়েছে। আর রাস্ট্র পরিচালনায়ও ওনার অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্কতা এখন স্বীকৃতি।

 

কাজী এনায়েত উল্লাহ
লেখক, সংগঠক ও উদ্যোক্তা
প্যারিস, ফ্রান্স

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২০ | কেবিসি নিউজ ফ্রান্স
Theme Developed BY NewsFresh