জিরা পানি একটি ভেষজ পানীয়। বিভিন্ন অসুখের আরোগ্য সাধনে ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিরা পানির প্রয়োজনীয়তা আছে।
ওজন কমাতে
জিরা পানি শরীরের চর্বি নিঃসরণে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে দেহের ওজন তাড়াতাড়ি হ্রাস পায়। দেহের ওজন সঠিক মাত্রায় ফিরে আসে। জিরা পানি দিনে দুবার খেলে এটি পেটের ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছাটা কমে যায়।
রোগপ্রতিরোধে ও বৃদ্ধিতে
জিরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধে বিশেষ কার্যকর। জিরায় আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন-এ ও সি আছে।
রক্তশূন্যতার চিকিৎসায়
জিরায় আয়রন বিদ্যমান থাকায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে রক্তশূন্যতা দূর করে। এতে শারীরিক সমস্যা দূর হয়।
এসিডিটি নিরাময়ে
জিরা পানি এসিডিটির সমস্যা দূর করে। যে কোনো কঠিন খাবার বা দেরিতে হজম হয় এমন খাদ্য খাওয়ার পর জিরা পানি বা সামান্য জিরার চূর্ণ সেবন করলে এসিডিটির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে
জিরা পানি পানের আরও একটি স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যাদের এ রোগ আছে, তাদের দিনে দুবার সেবন করতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে
জিরা পানি গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে উত্তম ওষুধ হিসাবে কাজ করে ও নিরাময় করে। তাই জিরার পানি পান করুন ও গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্ত থাকুন।
বমিভাব দূরীকরণে
জিরা পানি বমি বমি ভাব দূরীকরণে বিশেষভাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় জিরা পানি পান করতে পারেন।
দেহের পানিশূন্যতা দূরীকরণে
জিরা পানি গরমকালে শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। জিরা পানি স্বাস্থ্যসম্মত, যা প্রাকৃতিকভাবে দেহের তাপমাত্রা কমায়।
অনিদ্রা দূরীকরণে
জিরা পানি সেবন করলে ভালো ঘুম হয়। যারা দীর্ঘদিন অনিদ্রায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কিছুদিন জিরা পানি পান করুন। এতে ভালো ঘুম হবে। জিরা পানি ঘুমের জন্য খুবই উপকারী ভেষজ বীজ।
স্মৃতিশক্তি উন্নতি করে
জিরা পানি স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্ক শক্তিশালী করতে বিশেষভাবে কাজ করে। নিয়মিত কিছুদিন জিরা পানি পান করলে উল্লেখযোগ্যভাবে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে বৃদ্ধি করে।
দেহের দূষিত পদার্থ দূরীকরণে
জিরা পানি পান করলে যকৃতের ও পাকস্থলীর জন্য খুবই উপকারী এবং জিরায় বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের এবং ভেতরের অঙ্গের বিষাক্ততা দূর করে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদান মায়েদের বাড়তি পুষ্টিতে
জিরা পানিতে পর্যাপ্ত আয়রন বিদ্যমান থাকায় গর্ভবতী ও স্তন্যদান মায়েদের জন্য খুবই উপকারী ভেষজ উপাদান। তাই গর্ভস্থ ভ্রূণের, বাচ্চার এবং মায়ের আয়রনের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুস্থতায়
জিরা পানি সেবনে ত্বক সুস্থ ও টানটান রাখে। জিরা পানি দেহকে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান করে।
বার্ধক্য রোধে
জিরায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ, সি, ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিএজিং বিদ্যমান। তাই জিরা পানি পান করলে অকাল বুড়িয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে।
ব্রণ নিরাময়ে
জিরা পানি ব্রণের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হিসাবে কাজ করে। জিরা পানি পান করলে ব্রণ নিরাময় হয়।
জ্বালাপোড়া নিরাময়ে
জিরা পানি ত্বকের ও দেহের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
জিরা পানি তৈরির নিয়ম
পানি ১ লিটার, জিরা দেড় চা চামচ, চুলায় একটি হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে জিরা দিয়ে আরও ৮-১০ মিনিট ফুটিয়ে পানি পৌনে ১ লিটার হলে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করতে হবে। এটি চাইলে কুসুম গরম বা বরফ শীতল দুভাবেই খাওয়া যায়। আরও সুস্বাদু করার জন্য এর সঙ্গে সামান্য চিনি, বিট লবণ, গোলমরিচ গুঁড়া, লেবুর রস ও ধনিয়াপাতা বা পুদিনাপাতা কুচি যোগ করতে পারেন।
লেখক : হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক, মডার্ন হারবাল গ্রুপ