মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে সুরঞ্জিত বিশ্বাস (১৯) নামে এক তরুণ হত্যাকান্ডের একমাস ১২ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনার সাথে জড়িতরা রহস্যময় কারণে পুলিশে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের গড়িমসি ও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষ। এদিকে উল্টো স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটির আপোষ নিষ্পত্তি ও মামলা তুলে নেয়ার জন্য নিহতের পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকি ও মামলা তুলে নেয়ার চাপ দিচ্ছেন। আসামীদের গ্রেফতার ও ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে ২০ জুলাই বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত সুরঞ্জিতের পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুরঞ্জিতের বাবা সুধাংশু বিশ্বাস লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় নিহতের মা সাবিত্রী বিশ্বাস , চাচাতো ভাই রজেন্দ্র বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিতের মায়ের কান্না পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
লিখিত বক্তব্যে নিহত সুরঞ্জিতের বাবা সুধাংশু বিশ্বাস অভিযোগ করেন, গত ৭ জুন শ্রীপুর গ্রামের কালি মন্দিরে শীতলী পুজার আয়োজন করেন। কিন্তু নান্টু বিশ্বাস (৪৫), রসেন্দ্র বিশ্বাস (৬০), রনজিত বিশ্বাস , সুজন বিশ্বাস (১৯), মিলন বিশ্বাস (৪০), প্রণয় বিশ্বাস (৪২), সুকিল বিশ্বাস (২০), এন্টু বিশ্বাস (২৮), কানু বিশ্বাস (৪০) ও তাদের সহযোগিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় নারী পুরুষসহ ১০ জন আহত হয়। এরমধ্যে সুরঞ্জিত বিশ্বাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার পরদিন ০৮ জুন মারা যায়। ঘটনার আরেকদিন পর অর্থাৎ ৯ জুন কুলাউড়া থানায় ১১ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীদের মধ্যে পুলিশ নান্টু বিশ্বাস নামক একজনকে আটক করে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ রহস্যকারণে তাদের গ্রেফতার করছে না।
এসময় নিহত সুরঞ্জিতের মা সাবিত্রী বিশ্বাস কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী হাওরে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতেন। আমার ছেলে সুরঞ্জিত রাজমিস্ত্রী (পাকা কাজের) হেলপার (সহযোগি) ছিলো। তার রোজগারে পরিবারে কিছুটা অভাব দূর হতো। পুজো করতে গিয়ে আক্রোশের শিকার হয়ে আমার নিরপরাধ ছেলেটি মারা গেলো। আমি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার চাই। ছেলেকে হারিয়েছি, কিন্তু স্বামী ও ছোট ছেলেকে হারাতে চাই না। আসামীরা তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে এলাকার বাসিন্দা ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মেম্বার ছয়ফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল মামলা আপোষ নিষ্পত্তি করতে ও তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছেন। ইতোমধ্যে জোরপূর্বক ১৩ ইঞ্চি স্টাম্পে স্বাক্ষর নেন। এ ঘটনায় সুধাংশু বিশ্বাস মৌলভীবাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং ১৫৮ তারিখ ১৩/০৭/২২) দায়ের করেন।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মেম্বার ছয়ফুল ইসলাম জানান, ঘটনা যেদিন ঘটে সেদিন থানায় বসে বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বিষয়টি আপোষ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরদিন ছেলেটি মারা গেলে থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনার সাথে আমাদের আর কোন সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু নিহত সুরঞ্জিতে পিতা সুধাংশু আমিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুলাউড়া থানার উপ পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, সুরঞ্জিত হত্যার ঘটনায় এজাহারনামীয় এক নাম্বার আসামী নান্টু বিশ্বাসকে ওইসময় গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত হচ্ছে। এজাহারনামীয় বাকি আসামীদের গ্রেফতারে বিলম্বের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্যা ও পারিপার্শ্বিক কারণে আসামীদের গ্রেফতারে বিলম্ব হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামীদের অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।