দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে কিলঘুষি মারার ঘটনায় কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজি মোহাম্মদ ফখরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। বিচার না হলে উপজেলা চেয়ারম্যানভাইস চেয়ারম্যানরা একযোগে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি হারুন-অর রশীদ হাওলাদার এ ঘোষণা দেন। আবুল কালাম আজাদকে কিলঘুষি মারার ঘটনার বিচারের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
হারুন-অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তারা এ ঘটনার দ্রুত শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছেন। আগামী মাস শেষ হওয়ার আগেই তারা দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে কয়েকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান হারুন-অর রশীদ। তিনি বলেন, ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। রাজি মোহাম্মদ ফখরুলের আচরণের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর আনুষ্ঠানিক আবেদন করা হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর দেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা ঢাকায় সমাবেশ করবেন। তারপরও যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে সব উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রী ও নিজ নিজ এলাকার জনগণকে অবহিত করে একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।
১৬ জুলাই বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা হয়। সভার একপর্যায়ে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজি মোহাম্মদ ফখরুল দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে কিলঘুষি মারেন বলে অভিযোগ ওঠে।
হারুন-অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় শালীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আবুল কালাম আজাদকে যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে অ্যাসোসিয়েশন তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে।
ব্যক্তি স্বার্থ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থে আবুল কালামকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে দাবি করে হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনা নজিরবিহীন। এ ঘটনা সরকারকেও বিব্রত করেছে। এ ঘটনা দেশের ৪৯২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সব জনপ্রতিনিধিদের আহত করেছে।
সংগঠনটির সভাপতি বলেন, তারা ধৈর্যের সঙ্গে আশা করেছিলেন যে রাজি মোহাম্মদ ফখরুল দায় স্বীকার করবেন। নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু তিনি উল্টো পথে হাঁটছেন। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টির রাজনৈতিক সমাধান চায় বলে উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, রাজি মোহাম্মদ ফখরুল ও আবুল কালাম আজাদ উভয়ই আওয়ামী লীগ দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আবুল কালাম ইতিমধ্যে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে আবুল কালাম আজাদকে মুঠোফোনে সংযুক্ত করা হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় রাজি মোহাম্মদ ফখরুল তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে ঢাকায় আওয়ামী লীগ একটি বৈঠক ডেকেছে। সেখানে দুজনকেই ডাকা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ ঘটনায় তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলার নেতারা।