বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকার ঘোষিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের ২য় ধাপ চলমান আছে। ১ম পর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ১২৫ টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুন মাসে।
গত ৪ মে ২০২১ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২য় ধাপে অনুমোদন পায় দেশের ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ষোলশত কোটি টাকা।
২য় ধাপে ১৮৬টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের এই প্রকল্পতে অন্তর্ভুক্ত আছে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাও।
সরকার ঘোষিত এই শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ২২ আগস্ট কুলাউড়ায় প্রস্তাবিত স্থান ভূকশিমইলের ৬ নং ওয়ার্ড কানেহাত গ্রামস্থ টেকারবন মাঠ পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল মোল্লা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু ও পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ সহ আরো প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত স্থান ভূকশিমইল পরিদর্শনের পরপরই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে রীতিমত ঝড় তুলেছেন কুলাউড়া উপজেলার নাগরিকরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে লিখেছেন, পৌরসভা রেখে হাওর অঞ্চলের দিকে স্টেডিয়ামটি করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে জানান, “এখনও কোন সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়নি। দয়া করে কোন বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না। চেষ্টা করা হচ্ছে শহরের আশপাশে স্টেডিয়াম নির্মাণ করার। তবে বাস্তবতা হচ্ছে শহরের পাশে মিনি স্টেডিয়াম করার মতো কোন জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কোন উত্তম জায়গার খবর পেলে আমাদেরকে জানাবেন। আসুন সবাই মিলে চেষ্টা করি।“
উপজেলার অনেক খেলোয়াড়দের মতে শহরের আশেপাশে স্টেডিয়ামটি করা হলে সবাই প্র্যাক্টিসের সুযোগ পাবে। স্টেডিয়ামটি শহরে হলে যাতায়াতের অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়াও শহর এলাকা উন্নত থাকায় বর্ষাকালেও মাঠের অবস্থা ততোটা নাজেহাল হবে না বলে অনেকে মনে করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছেই। ১৩ টি ইউনিয়নের মানুষের দাবি তাদের ইউনিয়নে কেন স্টেডিয়ামটি হবে না।
হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুস্তাক চৌধুরী লিখেছেন, হাজীপুর ইউনিয়নের পিরেরবাজার খেইরটিলা মাঠ মিনি স্টেডিয়াম করার জন্য ১০০ ভাগ উপযুক্ত জায়গা। এই মাঠের সাথে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এর তুলনা করলে কম হবে।বর্ষার সময়ও এ মাঠে কাঁদা হয় না। এটা এখন সময়ের দাবী।
বরমচাল ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব লিখেছেন, আমাদের বরমচাল ফুটবল খেলার মাঠ স্টেডিয়াম থেকে কম নয়। মৌলভীবাজার সহ তথা সিলেট বিভাগের ক্রীড়াপ্রেমী জনসাধারণ এক নামে চিনে বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল খেলার মাঠকে।
কুলাউড়া পৌর এলাকার তরুণ ফুটবলার মঈনুল ইসলাম লিখেছেন, পৌরসভার প্রান কেন্দ্র জয়পাশার ৬ এবং ৭ নং ওয়ার্ডে রয়েছে অনেক জায়গা। আর এই জায়গা হলো শহরের মধ্য মিনি স্টেডিয়ামের জন্য উপযোগী । পৌর এলাকায় আরো অনেক জায়গা আছে, জয়পাশা, আলালপুর, কলেজের আশে পাশে মনসুর এলাকায় অনেক জায়গা আছে। বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহবুব হাসান জসিম লিখেছেন, ভূকশিমইলের ৬ নং ওয়ার্ড কানেহাত গ্রামস্থ টেকারবন মাঠে প্রায় ২০ কিয়ার পতিত সুবিশাল জায়গা আছে। কাদিপুর-ভূকশিমইল-বরমচাল সড়কের মাধ্যমে উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটে পালেরমোড়ায় পৌঁছা যায়। আধুনিক মাঠের জন্য এলাকাবাসী বিনামূল্যে জায়গা দিতে আগ্রহী। যেহেতু পৌরসভার আশেপাশে উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না তাই সরকার এই স্থানে স্টেডিয়াম করলে তা সমগ্র কুলাউড়ার ক্রীড়াক্ষেত্রকে অনেক সমৃদ্ধ করবে।
তবে ভূকশিমইল ইউনিয়নে স্টেডিয়াম হওয়া নিয়ে আছে দ্বন্দ্ব, আছে সংশয়। অনেকের মতে বর্ষার মৌসুম এলেই তলিয়ে যায় এ ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ এলাকা।
অনেকে আবার মজার ছলে যুক্ত করছেন তাদের নানা মন্তব্য। সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন, হাওরের মাঝখানে স্টেডিয়াম তৈরি করা হউক সমস্যা নাই, মাঠের বরাদ্দের সাথে হেলিকপ্টার বরাদ্দ রাখবেন, খেলোয়াড় দর্শক যাতায়াতের সুবিধার্থে ।
রাফসান মোহাম্মদ রাহিন মজার ছলে লিখেছেন, বর্ষা মৌসুমে খেলোয়াড়রা সুইমিংপুলে গোসল করবে আর নৌকা দৌড়াইবে।
তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা চান, সকল জনপ্রতিনিধের সমন্বয়ে সঠিক স্থানে হোক এই স্টেডিয়ামটি।
কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন এখনও কোন সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়নি। স্টেডিয়াম স্থাপন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য আমরা ইতোপূর্বে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের রেজুলেশনের মাধ্যমে কাদিপুর ইউনিয়নের হ্যালিপ্যাড এর জায়গায় স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকারের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করি। এ ব্যাপারে এখনো কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিকল্প হিসাবে লোহাইউনি চা বাগানের নিকটবর্তী সড়ক সংলগ্ন ৪ একর জমি প্রাথমিক ভাবে চিন্হিত করে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
লেখক : প্রেস এক্সিকিউটিভ
দ্যা লাইট গ্রুপ