অবশেষে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত পেল চা-শ্রমিকেরা
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর, খুঁটি সরিয়ে নিলেন ঠিকাদার
এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন ঠিকাদারের লোকজন।
গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে টাকা ফেরত পেলেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগানের আওতাধীন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের চা-শ্রমিকেরা। ওই বাগানের ৩৫০ চা-শ্রমিকের কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে প্রথম কিস্তিতে নেওয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন ঠিকাদারের মনোনীত ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ।টাকা পাওয়ার বিষয়টি বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিশ্চিত করেছেন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের সর্দার সজল বুনার্জি।গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নামে চা-শ্রমিকদের থেকে টাকা আদায়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ ও এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।এরপর পিডিবির আওতাধীন এলাকায় টেন্ডার ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছা এবং চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনা তদন্তে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করেন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন।মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরের ডিজিএম (কারিগরি) মো. নজরুল ইসলাম মোল্লাকে প্রধান করে ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য হলেন বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।পরদিন মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেন এবং চা-শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন।এদিকে তদন্ত চলাকালীন সময়ের মধ্যে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের মন্দির এলাকা থেকে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেন ঠিকাদারের লোকজন।এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের সর্দার সজল বুনার্জি মুঠোফোনে বলেন, ‘বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আমাদের একটা কমিটি হয়েছিল। ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান ঠিকাদার দুলুকে দেওয়ার জন্য যে টাকাগুলো নিয়েছিল তা তিনি (শাহাজান) কমিটির কাছে ফেরত দিয়েছেন। শাহাজান বলেছেন তারা না-কি বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে না। তাই টাকা ফেরত দিয়েছেন।’সজল বুনার্জির মতো টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাগানের হাসপাতালের কর্মচারী (ড্রেসারম্যান) শমীরন দাস।আলাপকালে চা-শ্রমিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করে ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ বলেন, ‘দুলু মণ্ডল ভাইয়ের কাছে কিছু টাকা ছিল, আমার কাছেও কিছু ছিল। শনিবার দুলু ভাই ওই টাকাগুলো আমাকে ফেরত দিয়েছেন। এরপর আমি চা-শ্রমিক নেতাদের কাছে টাকাগুলো ফেরত দিয়েছি। খুব ঝামেলায় আছি। এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।’তবে ঠিকাদার আব্দুল মালেকের সুপারভাইজার দুলু মণ্ডল বলেন, ‘ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজানের সাথে আমার কোনো লেনদেন হয়নি। সে হয়তো আমাদের নাম ভাঙিয়ে চা-শ্রমিকদের থেকে টাকাগুলো নিয়েছে। আর বাগান এলাকায় রাখা খুঁটিগুলো আমরা আশপাশের এলাকায় সংস্কার কাজের জন্য রেখেছিলাম। বর্ষার জন্য কাজ করতে পারিনি। এখন খুঁটিগুলো কাজের জন্য নিয়ে গেছি।’মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া ও পিডিবির এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি যাওয়ার ঘটনাটি তদন্তে গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। নিজেও ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’প্রসঙ্গত, এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার জন্য ২০২০ সালের দিকে ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করেছিল মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এই বাগানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতায় গ্রাহক থাকায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জিয়াউর রহমান ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অনাপত্তিপত্র (এনওসি) চেয়ে আবেদন করেন। এই বছরের ৩০ অক্টোবর পিডিবি অনাপত্তিপত্র প্রদান না করার কারণ জানিয়ে পবিসকে চিঠি দেয়। এরপর পিডিবির অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব কার্যক্রম স্থগিত রাখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। তবে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের দিকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টেন্ডার পেয়েছেন জানিয়ে এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঠিকাদার মালেক, সুপারভাইজার দুলু এবং স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজান আহমদ।বিদ্যুৎ সংযোগের বিনিময়ে ৩৫০ চা-শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা করে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা নেওয়ার চুক্তি করেন তারা। চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকেরা প্রথম কিস্তিতে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন ইলেকট্রিশিয়ান শাহাজানের কাছে। এরপর সেখানে পল্লী বিদ্যুতের ৩৬টি খুঁটি আসলেও কোনো কাজ হয়নি।