ইন্ডিয়া হারবাল মেডিকেল নামে গ্যারান্টিসহ স্থায়ী চিকিৎসা আপনি কি স্থায়ীভাবে মোটা বা স্বাস্থ্যবান হতে চান? হাঁপানী ও শ্বাসকষ্টের চ্যালেঞ্জিং সমাধান। ২১ দিনে চিরমুক্তি, ৩ ঘন্টায় ফলাফল, এক ফাইলই যথেষ্ট, চিকন স্বাস্থ্য মোট করুন। এখানে অভিজ্ঞ হাকীম দ্বারা যৌন দুর্বলতা, অশর্^, গেজ, পাইলস, হাঁপানী, চর্মরোগ, জন্ডিস, পাইলস, গ্যাস্টিক, আমাশয়, বাত-ব্যথা, যৌন মিলনে অক্ষমতা, স্বাস্থ্যহীনতাসহ মহিলাদের লিউকোরিয়া ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সু-চিকিৎসা করা হয়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এভাবেই আর্কষণীয় বিজ্ঞাপনে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দেলোয়ার হোসেন তপন নামে এক ভূয়া হারবাল চিকিৎসক। তার বাড়ি বরিশালে। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিক হলেন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার হাওলাদার কান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান অপু। তার পিতার নাম গিয়াস উদ্দিন তালুকদার।
৫ ডিসেম্বর সোমবার উপজেলা প্রশাসন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সহযোগিতা করেন ঔষুধ প্রশাসন মৌলভীবাজারের ঔষুধ তত্ত্বাবধায়ক সিরাজুম মনিরা ও কুলাউড়া থানার উপ-পরির্শক পরিমল চন্দ্র দাস। অভিযানে ইন্ডিয়া হারবাল মেডিকেলের দেলোয়ার হোসেন নামে ভূয়া চিকিৎসককে আটক করা হয় এবং তার ভাড়াটে বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে ঔষুধ চন্দনাসব ২৭ বোতল, সুরাঞ্জান ১২০ প্যাকেট, এ্যাডা ৪ বোতল, বলারিষ্ট ৫ বোতল, রোহিতকারিষ্ট ২২ বোতল, অনিসিড ১ কার্টন, ত্রংকোফেরা ৫ বোতলসহ বিভিন্ন রকম ভেজাল ঔষুধ, ১৫০০ পোস্টার, ১২০০ ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন ও মেমো জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া উছলাপাড়া এলাকায় মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষুধ বিক্রির অভিযোগে আব্দুল্লাহ মেডিকেল হল নামে আরেক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভূয়া হারবাল চিকিৎসক দেলোয়ার কুলাউড়া পৌর শহরের উছলাপাড়া গ্যাস পাম্প এলাকায় “ইন্ডিয়া হারবাল মেডিকেল’ নামে এক প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঝাঁকজমক পোস্টার-ব্যানার দিয়ে সাজিয়েছেন চেম্বার। দরজার গ্লাসে বড় অক্ষরে লিখে রেখেছেন ‘রোগ নিরাময়কারী মহান আল্লাহ, চিকিসৎক মাত্র উছিলা’। তার চিকিৎসায় আবার অনেক রোগীকেই তিনি দিচ্ছেন রোগ মুক্তির শতভাগ নিশ্চয়তা।
সরেজমিন উছলাপাড়া এলাকায় ভূয়া চিকিৎসক হাকিম দেলোয়ার হোসেনের ভাড়াটে বাসায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি কক্ষে ইন্ডিয়ান হারবালের রঙ বেরঙের লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড, বড় বড় পোস্টার, যৌন উত্তেজক ভেজাল ঔষুধ ও ঔষুধ তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়। এছাড়া রেজিস্ট্রি খাতায় দেখা যায় গত নভেম্বর মাসে তারা ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ঔষুধ বিক্রি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুলাউড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হারবাল চিকিৎসা। মহামারী করোনার মাঝে ৬ মাস এসব প্রতিষ্ঠান কিছুটা বন্ধ থাকলেও গত এক বছর ধরে আবারও এসব হারবাল ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের নিজস্ব তৈরি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট দিয়ে অস্বাস্থ্যকরভাবে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ তৈরি করে সহজ সরল মানুষের কাছে বিক্রি করছেন তারা। আর এসব সেবনের ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কেউ আবার বরণ করছেন পঙ্গুত্ব, লজ্জায় আবার কেউ বিষয়টি নীরবেই সহ্য করে যাচ্ছেন। এসব দোকানের কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স তৈরি করে দেদারছে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের অভিযানে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার যেই-সেই।
অভিযোগের বিষয়ে আটক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত দুই বছর ধরে তিনি কুলাউড়ায় নিরাময় ইউনানী মেডিকলে নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তবে ড্রাগসের লাইসেন্সের জন্য তিনি আবেদন করবেন। অনুমোদন ছাড়া কিভাবে এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজের তৈরি একটি প্রেসক্রিপশন দিয়ে রোগীদের দুইশত টাকা ফিস নিয়ে শুধু আমাদের তৈরি করা ওষুধ লিখে দিচ্ছি। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরণের কাজ করবেন না বলে জানান। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, ঔষুধ প্রশাসনের অভিযোগ পেয়ে জনস্বার্থে দুটি হারবাল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অনুমোদনহীন ঔষুধ বিক্রি, মজুদ ও লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠানে ভেজাল ঔষুধ বিক্রির অপরাধে ঔষুধ আইন ১৯৪০ ধারায় আটক দেলওয়ার হোসেনকে ১ মাসের বিনাশ্রম জেল ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করে তাকে কুলাউড়া থানায় প্রেরণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে তারা দীর্ঘদিন থেকে ভেজাল ঔষুধ বিক্রি করে আসছে। যা মানুষের স্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরবর্তীতে যদি ওই প্রতিষ্ঠানে আবার ব্যবসা পরিচালনা করা হয় তবে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।