মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের বিজয়া বাজার সংলগ্ন মাঠে ওরুসের নামে অশ্লিলতা ও যাত্রাপালা বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় ১১টি পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন। জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের কামারকান্দি, গিয়াসনগর ও রংগীরকুল এলাকায় অবস্থিত ১১টি পঞ্চায়েতের সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত এই আবেদন করা হয়েছে। একই আবেদন কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ও জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরও দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর যাবত স্থানীয় কয়েকজন লোক একত্রিত হয়ে জয়চন্ডী ইউনিয়নের বিজয়া বাজারের পাশে অবস্থিত বাঘের টিলাকে “বাঘা শাহ্” নামে রূপান্তরিত করে ওরুস শুরু করে। স্থানীয় সচেতন লোকজন শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও আয়োজকরা কোন কর্ণপাত করেনি। বর্তমানে এখানে ওরুসের নামে প্রকাশ্যে অশ্লিলতা ও যাত্রাপালার মতো নগ্ন নৃত্য শুরু করেছে তারা। আর এই ওরুসকে কেন্দ্র করে এখানে খোলামেলা মাদক সেবন, জোয়ার আসরসহ মধ্যরাতে অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু হয়। বিগত দিনে এই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের সংঘাতেরও সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পবিত্র শাবান মাস চলছে, যা ইসলাম ধর্মালম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস ও শবে-বরাতের মতো একটি মহিমান্বিত রাত আগত। এরপরও আগামী ১০ ও ১১ মার্চ ওই স্থানে ওরুসের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার-লিফলেট দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ৩-৪ জন লোক। বিষয়টি নিয়ে দু’টি ওয়ার্ডের ১১ টি পঞ্চায়েতের লোকজন বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। এদিকে মঙ্গলবার বিকালে জয়চন্ডী ইউনিয়ন আল-ইসলাহ’র পক্ষ থেকে ওরুস বন্ধের দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পৃথক আরেকটি আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, এই বাঘের টিলায় কোন ওলি-আউলিয়াতো দূরের কথা, কোন কবরই নেই। আশপাশের ২-৩ জন লোক নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য ওরুসের নামে এমন বেহায়াপনা কাজ শুরু করেছে। অথচ এই বাঘের টিলার পাশেই হযরত বিবি মাই (র:) মাজার এবং এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ কবরস্থান রয়েছে। ওরুসের সময় আগত লোকজন রাতের বেলায় মাদক সেবন করে যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে বিবি মাই (র:) মাজার ও কবরস্থানের পবিত্রতা বিনষ্ট করে। এরকম অসামাজিক আয়োজন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আঘাত হানে। সম্প্রতি এলাকায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এইবার ওরুসের আয়োজন করা হলে তাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। যা বড় ধরণের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এ নিয়ে এলাকার লোকজন চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রব মাহাবুব জানান, ওরুস বন্ধের জন্য ১১ টি পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। ওরুসকে কেন্দ্র করে এলাকায় এখন দুটি পক্ষ যে মুখোমুখি, তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলবো। তিনি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে আমরা এলাকায় কোন সংঘাত চাইনা, শান্তি চাই।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। আমরা ওরসের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তদন্তক্রমে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, স্থানীয় ১১ পঞ্চায়েত কমিটি এবং আল-ইসলাহ সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় বা কোন সংঘাতের আভাস পাওয়া গেলে দ্রুত ওরুস বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Related