প্রত্যেক বছর ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু এবারই এর ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে। ঈদুল ফিতরের মাসেও কমেছে রেমিট্যান্স।
সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এই অঙ্ক চলতি বছরের মার্চ ও আগের বছরের এপ্রিল এ দুই সময়ের তুলনায় কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, প্রতি বছরই ঈদের আগে প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠান। এ সময় পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচের কথা মাথায় রেখে তারা বেশি অর্থ পাঠান। এবার ঈদ হয়েছে ২২ এপ্রিল। এবং ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হয়েছে ১৯ এপ্রিল। ফলে মার্চ মাসেই তারা ঈদকেন্দ্রিক রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ফলে মার্চে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) এ অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে ৩৩ কোটি ৯ লাখ ডলার কম। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। একইসঙ্গে আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও রেমিট্যান্স কমেছে ৩২ কোটি ৭ লাখ ডলার। আগের বছর ঈদুল ফিতরের সময় অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮
ঈদের সময় হঠাৎ রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, সাধারণত ঈদের সময় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। এবারও মাসের প্রথম দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল। কিন্তু শেষ দিকে কমেছে। কেন রেমিট্যান্স কমল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলা হয়েছে। রেমিট্যান্স কী সার্বিকভাবে কমেছে নাকি বিশেষ কোনো দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে এটা দেখা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারব।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত) ১০ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে প্রায় ৪১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।