একটি সাধারণ ছোট্ট সাইকেল দিয়ে পনেরো হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা সুপ্রিয় পাল (২২)। তিনি গড়ে প্রতিদিন দৈনিক ১০০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালানোর ১৫০তম রাইড সম্পন্ন করেন। সুপ্রিয় পাল টিলাগাঁও ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা নির্মল কান্তি পাল ও গৃহিণী শিপ্রা রাণী পাল দম্পতির ছেলে। সে স্থানীয় আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে দারিদ্রতা কারণে আর বেশি পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকেই বাইসাইকেল চালানোর প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মে সুপ্রিয় পালের। তিনি সাইক্লিং গ্রুপ সেঞ্চুরিয়ান রাইডার্সের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই গ্রুপে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের অধিক সদস্য রয়েছেন।
সুপ্রিয় পাল জানান, তাদের এলাকার ৬৫ বছর বয়সী এক প্রবীণ ব্যক্তি সপ্তাহে ১দিন বাইসাইকেল নিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সিলেট শহরে চলে যেতেন। উনার কাছ থেকে সাইকেল চালানোর সেই গল্প শুনেই তিনি শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাও আবার একদম সাধারণ মানের নন গিয়ার (এভন) বাইসাইকেল দিয়েই স্বপ্ন পূরণের যুদ্ধে নামেন তিনি। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে গিয়ে প্রথম ১০০ কিলোমিটার বাইসাইকেল রাইড সম্পন্ন করেন তিনি। এরপরে আর থেমে থাকেনি তাঁর বাইসাইকেলের প্যাডেল। গত শুক্রবার (৯ জুন) টিলাগাঁও, রবিরবাজার, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল হয়ে আবার টিলাগাঁওয়ের বাংলা বাজার পর্যন্ত বাইসাইকেল চালিয়ে তিনি ১০০ কিলোমিটারের ১৫০তম সেঞ্চুরি সম্পন্ন করেন।
তিনি আরো জানান, বাইসাইকেল চালিয়ে তিনি ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নরসিংদী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলা ভ্রমণ করেছেন। গত ৫ মে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ২৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিটে ৩০০ কিলোমিটার রাইড সম্পন্ন করেন তিনি। এর আগে সিলেট সাইক্লিং কমিউনিটির ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে চ্যালেঞ্জিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হন।
আগামীতে বাইসাইকেলে চালিয়ে ৬৪ জেলা ঘুরে দেখার স্বপ্ন ও বাইসাইকেল নিয়ে রেইস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার প্রবল ইচ্ছে আছে তাঁর। সে জন্য প্রয়োজন একটি ভালো রেইস সাইকেল। আর্থিক অবস্থার জন্য ভালো সাইকেল কেনা সম্ভব হচ্ছেনা বলেও জানান সুপ্রিয় পাল। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন ইভেন্টে সাইক্লিং করারও স্বপ্ন আছে রয়েছে তাঁর।
স্থানীয় টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালিক বলেন, সুপ্রিয় পাল খুবই দরিদ্র পরিবার থেকে বেড়ে উঠা। সাইক্লিং করে সে ইতিমধ্যে অনেক জায়গা ভ্রমণ করেছে। তবে এই ছেলের অগ্রযাত্রায় আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করে এগিয়ে আসা উচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, ছেলেটি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতার করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।