গরু, মহিষ, গবাধি পশুসহ মৃত প্রাণী বা পচা-গলা ও বর্জ্য শকুনের খাবার। লাখ লাখ বছর ধরে শকুনই প্রকৃতি থেকে মৃতদেহ সরানোর কাজ করে রোগব্যাধিমুক্ত পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কয়েক দশক আগেও গ্রামগঞ্জে গরু, মহিষসহ গবাধিপশুর মৃতদেহ যেখানে ফেলা হতো সেখানে দলে দলে হাজির হতো শকুন। তবে নির্বিচারে বৃক্ষনিধনে শকুনের আবাসস্থল বিনষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি গবাধি পশুর চিকিৎসায় ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ দেওয়া গরু, মহিষ, ছাগলের মৃতদেহ খেয়ে কিডনি নষ্ট হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে শকুন মারা যায়।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে, সারা দেশে ২৫০ থেকে ২৬০টি শকুন রয়েছে। এর বড় অংশই রয়েছে সুন্দরবনে। তাছাড়া হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গায় ৫০ থেকে ৬০টি শকুন রয়েছে। উঁচু গাছের ওপরে নেট বসিয়ে দেওয়ায় রেমাকালেঙ্গায় শকুন বাসা বাঁধছে এবং নতুন বাচ্চাও দিচ্ছে বলে বন বিভাগ দাবি করছে। তবে শকুন মহাবিপন্নের তালিকায় হলেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এর সংরক্ষণ ও গুরুত্ব বেড়েছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএনের যৌথ উদ্যোগে শকুন সংরক্ষণে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের পর শকুন নিয়ে কোনো গবেষণা না হওয়ায় বর্তমানে শকুনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির শকুনের মধ্যে বাংলা শকুনটিই কোনোমতে টিকে আছে। এ দেশে বেশি দেখা যেত বলেই তাদের নামের শেষে বাংলা শব্দটি চলে এসেছে। দেশীয় প্রজাতির বাংলা শকুন ইংরেজি নাম হোয়াইট-রামপট ভালচার। বর্তমানে শকুন অতি বিপন্নের তালিকায়। যে কারণে বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিলেটের রেমা-কালেঙ্গা ও সুন্দরবনকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে শকুন সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শকুন সচেতনতা দিবস হিসেবে এ বছর করোনার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। আমরা ঐ কর্মসূচির সঙ্গে ভার্চুয়ালি রেমা-কালেঙ্গা থেকে যুক্ত হব এবং সেখানে শকুনের জন্য খাবার হিসেবে মৃত গরু দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শকুনের সার্বিক অবস্থা বলা মুশকিল। তবে গত মাসের ২০ থেকে ২১ তারিখে মৌলভীবাজারের দীঘিরপাড় নামের একটি স্থানে গরু মারা যাওয়ার পর সেখানে ১৪টি শকুন আসতে দেখা গেছে। শকুন বছরে একবার একটা ডিম দেয়। অনেক সময় সেটিও ফোটে না। সেটি শকুনের নিজের জন্যও হুমকি। সিলেট এলাকা শকুনের সেভ জোন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেমাকালেঙ্গায় বাচ্চা ফোটানোর সময় শকুনের খাওয়ার জন্য গরুর মাংস দেওয়া হয়।
Related