কুলাউড়ায় জিলান হত্যায় প্রতিপক্ষের করা প্রতিহিংসামূলক মামলায় বিনা অপরাধে জেল খাটছেন উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের রুমেল খান। তাঁর স্ত্রী সাজিয়া সুলতানার দাবি, পূর্বের একটি বিরোধের জেরে প্রতিহিংসামূলক ও মিথ্যা মামলায় স্বামীকে জড়ানো হয়েছে।
রুমেল খান উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের মৃত ছরবর খানের ছেলে।
নিহত জিলানের মৃত্যুর ঘটনায় ৯ জুলাই তার পিতা আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আরো ৫-৬জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় রুমেল খানকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ১ নম্বর আসামী করা হয়েছে। ২ ও ৩ নম্বর আসামী পৌরসভার দত্তরমুড়ি এলাকার বাসিন্দা গিয়াস মিয়ার ছেলে রিয়াজু রহমান সাজু (৩২), আব্দুল্লাহ আল মিজু (২৬), ৪ নম্বর গিয়াসনগর গ্রামের নেওয়ার আলীর ছেলে হেলাল আহমদ (৩০), ৫ ও ৬ নম্বর দত্তরমুড়ি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে মাহি হোসেন (২০), মঞ্জু মিয়া (২৬), ৭ নম্বর ঘাগটিয়া গ্রামের আফসর খান (৬২), ৮ নম্বর জিহাদ খান (৩৫) ও ৯ নম্বর মুরাদ খান (৩৫)। এই তিনজন রুমেল খানের চাচাতো ভাই।
এদিকে গত ৭ জুলাই রাতে রুমেল খানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে ৮ জুলাই হেলাল আহমদ ও মাহি হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই হত্যার সাথে জড়িত মূল আসামীরা এখনো ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে কুলাউড়া স্কুল চৌমুহনী এলাকায় গিয়াস মেকানিকের ছেলে আব্দুল্লাহ’র সাথে ঝগড়া হয় আব্দুল হামিদের ছেলে জিলানের। ওই সময় জিলান তার সহযোগীদের নিয়ে আব্দুল্লাহকে মারপিট করে। ওই ঘটনার জের ধরে ৩ জুলাই জিলানের ওপর ফিল্মি স্টাইলে সাজু ও আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে হামলা হয়।
মামলার ২ নম্বর আসামী সাজু আগে থেকেই প্রবাসে থাকতেন। দেশে এসেই ভাইয়ের ওপর হামলার বিষয়টি জেনে ক্ষিপ্ত হয়ে জিলানের ওপর হামলা করে আত্মগোপনে থেকে বিদেশে পলায়ন করেছে এবং তার ভাই আব্দুল্লাহও পলাতক।
রুমেল খানের স্ত্রী সাজিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী রুমেল খান একজন সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। আমার স্বামী যদি জিলান হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতেন তবে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতেন। ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিলেন। ঘটনা হয়েছে শহরে তাহলে আমার স্বামী বাড়িতে থেকে কিভাবে মামলার আসামী হলেন। বর্তমানে প্রতিহিংসামূলক মামলায় আমার স্বামী বিনা দোষে জেল খাটছেন। আমার শ্বাশুড়ি অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ৭ বছরের একমাত্র অবুঝ ছেলে উমর খান বাবা বাবা বলে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন আমার ভাসুর আফসর খান ও জিহাদ খান বাড়িতে এবং দেবর মুরাদ খান আইএলটিএস কোর্স করতে সিলেটে ছিল। তারপরও তাদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই এবং আমার নির্দোষ স্বামীর মুক্তি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মামলা থেকে অব্যাহতি চাই।
মামলার বাদী আব্দুল হামিদ বলেন, ২০২২ সালে কবুতর নিয়ে রুমেল খানের ভাতিজা ও আমার ছেলে ঝগড়া করে। বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে আমি রুমেল খানের বাড়িতে যাই। সেখানে তারা আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। এ ঘটনায় আমি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করি। এরই জের ধরে রুমেলের পরিকল্পনায় গিয়াস মিয়ার ছেলে সাজু ও আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে ৭-৮ জন মিলে আমার ছেলের উপর নৃশংসভাবে হামলা করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই বিদ্যুৎ পুরকায়স্থ বলেন, ‘মামলার এজাহারে রুমেল খানকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করেছেন বাদী। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে অধিকতর তদন্তে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে’।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, নিহতের পিতা আব্দুল হামিদের দায়েরকৃত এজাহারের ভিত্তিতে থানায় হত্যা রুজু হয়। এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে হোসাইন মুহাম্মাদ জিলান মোটরসাইকেলযোগে তার ছোট ভাইকে বাসে তুলে দিতে শহরে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের দক্ষিণ বাজারের বাসস্ট্যান্ডে ওৎপেতে থাকা গিয়াস মেকানিকের ছেলে সাজু ও আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে ৭-৮ জন জিলানের গতিরোধ করে। এসময় পূর্ব বিরোধের জেরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জিলানকে বেধড়ক মারধর শুরু করে সাজু ও আব্দুল্লাহ। জিলান প্রাণে বাঁচতে মোটরসাইকেল থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ডের সম্মুখে আয়েশা টেলিকম নামক একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে ওই দোকানে ঢুকে সাজু ও আব্দুল্লাহ জিলানকে টেনে হিচড়ে সেখান থেকে বের করে এনে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে এবং কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৭ জুলাই শুক্রবার রাতে জিলান মারা যায়। ওই হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।