মৌলভীবাজারে কুলাউড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গহীন অরণ্যে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন সংগঠনের আস্তানা থেকে সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলির জুগিটিলা গ্রামে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকায় একটি টিলায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ও সোয়াট এবং পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে নারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের সাথে থাকা তিন শিশু সন্তানকেও উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় ও অভিযানে থাকা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে জানা যায়, প্রায় মাস তিনেক আগে কুলাউড়ার কর্মধার পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের বাসিন্দা ও কাতার প্রবাসী রাশিদ মিয়ার মালিকানাধীন ৫০ শতকের টিলা ভূমি ক্রয় করে জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা। এটি ক্রয়ে স্থানীয় এক ব্যাক্তি তাদের সহযোগিতা করেন। ওই টিলায় চারটি টিনের ঘর তৈরী করে বসবাস শুরু করে শিশু-নারীসহ ১৫/১৬ জন সদস্যের পরিবার। প্রয়োজন ছাড়া ওই টিলা থেকে নামতোনা তারা। তাদের চলাফেরা নিয়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে নদী গর্ভে নিজেদের বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানে এসে ভূমি ক্রয় করেছে ও তারা সেখানে সবজি চাষ সামাজিক বনায়ন করবে বলে জানায়। এদিকে সপ্তাহ খানেক আগে সংগঠনের এক সদস্য তার পরিবারকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকায় গেলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করে সিটিটিসির সদস্যরা । আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে কুলাউড়ার জুগিটিলায় তাদের নতুন আস্তানার কথা স্বীকার করে। সেই সুত্র ধরে সিটিটিসির সদস্যরা ওই এলাকায় প্রায় সাতদিন সেখানে অবস্থানরত সংগঠনের সদস্যদের নজরদারীতে রাখেন। নিশ্চিত হওয়ার পর শুক্রবার রাতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ও সোয়াট এবং পুলিশ ওই টিলাটি ঘিরে রাখে। সকাল ৬ টা থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রফিকুল ইসলাম, হাফিজ উল্লাহ, খায়রুল ইসলাম, শরীফুল ইসলামসহ তাদের স্ত্রী চারজন ও আরো দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের তিন শিশু সন্তানকেও উদ্ধার করে পুলিশী হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা, বোমা তৈরীর বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন সামগ্রী ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা।
পরে পার্শ্ববর্তী আছকরাবাদ খেলার মাঠে উদ্ধার করে বোম ডিসপোসাল ইউনিটের সদস্যরা বিষ্ফোরণের মাধ্যমে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করেন।
ওই টিলাতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরী চারটি ঘরে বিপুল পরিমাণ চাল, সয়াবিন তেলসহ খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন গৃহসামগ্রী রয়েছে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই সংগঠনের প্রধান যে ব্যক্তি তার নাম পরিচয় পেয়েছি। এ মুহূর্তে তার নাম পরিচয় বলতে পারবোনা। তাঁকে গ্রেপ্তারে আমাদের বাহিনী কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, এরা নতুনভাবে জঙ্গী সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করেছে। তাদের কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য এরকম নির্জন গহীন পাহাড়ী এলাকায় আস্তানা গড়ে। তারা যে জমি কিনেছে সেটি ৫০ শতক। তাদের কাছ থেকে দলিলটি উদ্ধার করেছি। তবে জমির দাম যেটি দলিলে লেখা সেটি সঠিক কিনা ও কি পরিমাণ অর্থ এখানে ব্যয় হয়েছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত করে জানতে পারবো।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটিটিসির জয়েন্ট কমিশনার কামরুজ্জামান, সোয়াট কমান্ডার এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মনজুর রহমান, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুছ ছালেক।