মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ওই সংগঠনের শ্রমিকেরা প্রায় দেড় ঘন্টা কুলাউড়া -ঘাটেরবাজার সড়কটি অবরোধ করে রাখেন। এতে সড়কের উভয়পাশে প্রায় শতাধিক গাড়ি এক ঘন্টা আটকা পরে। আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের পুষাইনগর সিটিএস মন্দির সংলগ্ন রায়গ্রাম এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক জন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়, যাত্রী পরিবহন নিয়ে স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকদের বিরোধ চলছে। এর জের ধরে আজ বিকেলের দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকেরা জয়চন্ডী ইউনিয়নের রায়গ্রামের বাসিন্দা মৃত জজ মিয়ার ছেলে খায়রুল ইসলাম (৩৬) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের ওপর হামলা চালান পুষাইনগর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও বদরুল ইসলাম গং। এসময় খায়রুলেল অটোরিকশাটি ভাঙ্চুর করা হয়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সিএনজিচালিত অটোরিকশার শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত কুলাউড়া-ঘাটেরবাজার সড়
কের রায়গ্রাম এলাকায় সড়কে গাড়ি রেখে অবরোধের সৃষ্টি করেন। এসময় সড়কের উভয়পাশে বিভিন্ন ধরনের দেড় শতাধিক যানবাহন আটকা পড়লে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে কুলাউড়া থানার এসআই আমির হোসেন, অপু দাশ গুপ্তের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন পুলিশ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রæতি দিলে চালকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। আহত সিএনজি অটোরিকশা চালক খায়রুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার কুলাউড়া-ঘাটেরবাজার লাইন কমিটির সভাপতি সোহেল আহমদ টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সুন্দর আলী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা নেই। আমাদের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড আছে, সেখান থেকে আমরা যাত্রী নিয়ে যাই। কিন্তু তারা আমাদের স্ট্যান্ডের পাশে সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী তুলেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের চালকের ওপর হামলা ও গাড়িতে ভাঙচুর চালান। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করি। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমরা অবরোধ তুলে নেই।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ছরফর আলী, সাইস্তা মিয়া, ইমাম উদ্দিন ও সুলতান মিয়া বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা প্রতি দিন তাঁদের যাত্রী পরিবহনে বাঁধা দেন। অনেক সময় গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়েও নিয়ে যান। এ নিয়ে তাঁদের কিছু চালকের সঙ্গে অপর পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়। হামলা-ভাঙ্চুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন তাঁরা।
জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলীম উদ্দিন বলেন, যাত্রী পরিবহনে বাঁধা দেওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক আজ সকালে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। চেয়ারম্যান দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসও দেন। কিন্তু এরই মধ্যে হামলা ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে যায়।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি শাহাজাহান তালুকদার জানান, পৌরসভার নিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আমাদের স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে ইউনিয়নে যাওয়ার কারণে আমাদের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা বাঁধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে আমাদের এক চালককে একা পেয়ে তারা মারধর করে তার গাড়িটি ভাঙ্চুর করে। আমরা এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিব।
কুলাউড়া থানার এসআই অপু দাস গুপ্ত বলেন, মূলত যাত্রী পরিবহন নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যাটারিচালিত ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক সামান্য আহত হয়েছেন। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ওসি মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।