জুড়ী উপজেলার রাঘনা বটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, নৈশ্য প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয় পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৭ আগস্ট) বিদ্যালয়ের সভাপতি নাজমুল আলম লিজন সিন্ডিকেট করে প্রত্যেকটি পদে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন এমন অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট রাঘনা বটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, নৈশ্য প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আয়া পদে বর্তমানে কর্মরত দপ্তরীর স্ত্রী মীরা মল্লিককে এবং বাকি পদে সাগরনাল ইউনিয়নসহ অনেক দূর-দূরান্তের প্রার্থীদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, এলাকার প্রার্থীরা ভাল পরীক্ষা দিলেও তাদেরকে কম নম্বর দেখিয়ে ফেল দেখানো হয়েছে। এছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সভাপতি তিন লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন কিন্তু অন্য প্রার্থীর নিকট থেকে বেশী টাকা পেয়ে তাকে নিয়োগ না দিয়ে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পূর্বের প্রার্থীর টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে এলাকাবাসী আরো জানান, এ নিয়োগে কমপক্ষে ১৪/১৫ লক্ষ টাকার বাণিজ্য হয়েছে, যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তদন্ত করে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করতে উপজেলা নিবার্হী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় রবিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে এলাকাবাসী অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন।
আয়া পদের নিলুয়া ইয়াসমিন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদের আব্দুল কাইয়ুম অভিযোগ করে বলেন, ভালো পরীক্ষা দিয়েও আমাদের চাকরি হয়নি। টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমরা এ নিয়োগ বাতিলসহ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
নৈশ প্রহরী পদে পরীক্ষা দেওয়া ফুলতলা বস্তি এলাকার বোরহান মিয়ার পিতা চুনু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলের চাকুরির জন্য নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বেলাল আহমদের মাধ্যমে সভাপতি লিজন সাহেব দুই লক্ষ টাকা আমাকে দিতে বলেন। পরে চাকুরীর আমানত হিসাবে আমি বাজার মহালদার শাহজাহান মিয়ার নিকট এক লক্ষ টাকা আমানত রাখি। পরে অন্য প্রার্থী থেকে বেশি টাকা পেয়ে আমার ছেলেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো হয়েছে। আমি এ নিয়োগ বাণিজ্যের বিচারসহ পরীক্ষা বাতিল চাই।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল হান্নান ও বারী মিয়া বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যে টাকা লেনদেনের বিষয়টি আমরা শুনেছি। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, যথাযথ নিয়মে নিয়োগ পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নিয়োগে কোন টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম লিজন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছে তাদের অভিযোগ সত্য নয়। যোগ্যতা অনুযায়ী ও সঠিক নিয়মে পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ার বলেন, রাঘনা বটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও নিয়োগ বাতিল চেয়ে আবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, আমি নিজে উপস্থিত থেকে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রঞ্জন চন্দ্র দে বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।