সোমবার টেকসই উন্নয়নের ওপর নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
২০১৫ সালে জাতিসংঘে গৃহীত এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণের জন্য মোট ১৭টি লক্ষ্য স্থির করা হয়। এর পর থেকে সামগ্রিকভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রমোন্নয়নের ধারায় থাকলেও মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে প্রথমবারের মত তাতে ছেদ পড়েছে।
সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী শুরুর আগেও অনেক দেশ লক্ষ্য পূরণের পথে অনেকটা পিছিয়ে ছিল। মহামারী তাদের আরও পেছনে ঠেলে দিয়েছে।
“এসডিজি অর্জনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য আমাদের একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।”
আর সেজন্য প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পাঁচ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন।
প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এসডিজির সাফল্য এখন নির্ভর করছে এই মহামারী থেকে টেকসই উত্তরণের ওপর। বিশ্বের সব জায়গায় করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি এবং সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
শেখ হাসিনা তার দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, দেশগুলোর সম্পদের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে চাইলে তা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, মহামারীর অভিঘাতে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়ছে, যা উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের চেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯ সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপগুলো হতে হবে জলবায়ু সঙ্কটে নেওয়া পদক্ষেপের পরিপূরক, যাতে ভবিষ্যতের যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়।”
আর পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণ এবং সহয়তা কার্যক্রম আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সমন্বয় জোরদার করা উচিত। জরুরি পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলায় যথাযথ ও সময়োপযোগী সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোথাও বিচ্যুতি না ঘটে।”
মহামারী এবং অন্য সব জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রতিটি পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রস্তুতি বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। এই মহামারি বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্য আর ক্ষুধার শিকার হচ্ছে। শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে শিশুদের।
বাংলাদেশের মত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি এই মহামারীতে যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে কথা বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এর ফলে আমাদের উন্নয়ন এবং এসডিজির অগ্রগতি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
এই প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথাও সম্মেলনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমন এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ পথিকৃৎ। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি উচ্চাভিলাষী ও হালনাগাদ জাতীয় পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।”
পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন এবং টেকসই অবকাঠামো ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করার কথাও তিনি বলেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের পর থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪১তম। জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে।
“এই উত্তরণ এমন একটি সময়ে ঘটল, যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং সেই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করছি।
“আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জাতির পিতা এবং আমাদের লাখো মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এরচেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন আমাদের জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন, তা অর্জনের পথেই আমরা আছি।”