মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮জন নেতার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত নয়টায় উপজেলা বিএনপির (একাংশ) সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন। পরে থানা প্রাঙ্গনে প্রেসবিফ্রিং করে তিনি অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। এসময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান খাঁন, বর্তমান সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান মনির, আব্দুল জলিল জামাল, কমর উদ্দিন আহমদ কমরুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অভিযোগে যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ড. আরাফাত হোসেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের আরো ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে বাদী মোঃ শওকতুল ইসলাম উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ আওয়ামীলীগ সাধারণ মানুষ তথা বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনের মানুষের উপর গুম, খুনসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্যাতন করে আসছে। এমনকি ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য অকাতরে পাখির মত গুলি করে নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দেওয়া হত এমনকি প্রাণে হত্যার হুমকি দেওয়া হত। যার কারণে এতদিন প্রাণ ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পাতানো রাতের ভোটকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিভিন্ন জায়গায় দলীয় অফিসসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ বাজারে বিএনপির অফিসে শেখ হাসিনাসহ বাকি বিবাদীদের হুকুমে অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জন আসামীর হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র রড, দা, বাঁশের লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ও তাদের সাথে থাকা ককটেল দিয়ে বিএনপির অফিসে ভাংচুরসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয় এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে অফিসে আগুন দেয়া হয়। পরে অফিসের সামনে টায়ারে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করা হয়। ওই ঘটনায় তাদের অনেক নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন। সেদিন তারা প্রাণভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা না করাতে পেরে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শওকতুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে ভূকশিমইল ইউনিয়নে বিএনপির অফিস ভাংচুরের ঘটনায় আওয়ামীলীগের ভয়ে ওই সময় কোন প্রকার আইনের আশ্রয় নিতে পারেননি। কারো কাছে বিচার দিতে পারিনি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যারফলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দীর্ঘদিন পরে থানায় এসে শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি। আমার সাক্ষী আছে আমি আদালতে ঘটনার প্রমান করবো।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বুধবার মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়েছেন, অভিযোগটি আদালতে দাখিল করতে হবে। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।
Related