দীর্ঘ দিন ধরে চলা কোন্দলে বিপর্যস্ত কুলাউড়া বিএনপির বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের মধ্যস্থতায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। দীর্ঘ বিরোধ শেষ হওয়ায় আগামী দিনের সকল কর্মকান্ড এক হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বিবদমান দুটি অংশকে নিয়ে তাঁর বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন। চারঘন্টাব্যাপী চলে এ বৈঠক। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় চলা এ বৈঠকে বিএনপির বিবদমান দুটি অংশের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য একে একে তিনি ধৈর্য্যসহকারে শুনেন। এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য তিনি নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান। ওই বৈঠকে অংশ নেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, এডভোকেট আবেদ রাজা, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক মোশাররফ হোসেন বাদশা, সমন্বয়ক মো.হেলু মিয়া, আনিসুজ্জামান বায়েস, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপি নেতা মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শওকতুল ইসলাম শকু, জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, বদরুজ্জামান সজল, রেদোয়ান খান, শামীম আহমদ চৌধুরী, আব্দুল মন্নান, আজিজুর রহমান মনির, আব্দুল জলিল জামাল, রফিক আহমেদ, সুফিয়ান আহমদ, আব্দুল মোক্তাদির মুক্তার, হাজী রফিক মিয়া ফাতু, আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, সরোয়ার আলম বেলাল, দেলোয়ার হোসেন, শামীম আহমেদ, আকদ্দস আলী, বদরুল হোসেন খান, ফারুক আহমেদ পান্না, শেখ শহীদুল্লাহ, রাউৎগাঁও ইউপি সদস্য আব্দুল মুক্তাদির মনু, ব্রাহ্মণবাজার ইউপি সদস্য ছয়ফুল ইসলাম, সুরমান আহমদ ও রুমেল আহমদ প্রমুখ। বৈঠকে জেলা আহবায়কের প্রতি আস্থা রেখে নেতৃবৃন্দরা বলেন জেলা বিএনপির বিভক্তির কারণে আমরা উপজেলাও বিভক্ত ছিলাম । দীর্ঘ দিন রাজনৈতিক মতভেদের কারণে কুলাউড়ায় আমরা একে অন্যের সাথে একসাথে বসতে পারিনি। দলকে তৃণমূলে সুসংগঠিত করা যায়নি। এমনকি সামাজিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আমরা একে অন্যের সাথে খোলামেলা বসতে পারিনি। অথচ আমরা একদল করি কিন্তু দলের বিভক্তির এ দুরত্বের কারণে আমরা এক সাথে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সাজাতে বা সংগঠিত করতে পারিনি। আজকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়ায় আমাদের সুযোগ হয়েছে খোলা মেলা কথা বলার। যা অতীতে এ সুযোগ আমরা পাইনি। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দলে জেলার ঐক্য বিনষ্ট হলে উপজেলা বিনষ্ট হয়, উপজেলা বিনষ্ট হলে এর প্রভাব ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। যার ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, ঠিকমতো দল পরিচালনা করা যায় না। এর ফলে দল তৃণমূলে দুর্বল হয়।
নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন বলেন তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশ হচ্ছে- দলে কোনো বিভেদ ও মতভেদ রাখা যাবে না। দল করতে হলে আমরা সবাই দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এবার সুযোগ হয়েছে দলকে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত শক্তিশালী করার। এরই মধ্যে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা। উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি । এখন থেকে দলে আর কোনো পকেটে কমিটি করা হবে না। স্বজনপ্রীতি চলবে না। দলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলা হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। ময়ূন আরো বলেন বিগত ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পতনের আন্দোলন সংগ্রামে যেসকল নেতৃবৃন্দ জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে প্রাধান্য দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। সে জন্য জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সভায় প্রতিটি উপজেলার সমন্বয়কারীদের টিমদের এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন দলকে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে কর্মীসভা করে প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনে সহযোগিতা করার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি।
বৈঠক শেষে খুশীতে কুলাউড়া বিএনপির বিবদমান দুটি অংশের নেতৃবৃন্দ একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন এবং কুলাউড়া উপজেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেন। প্রসঙ্গত, আগামী ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে সামনে রেখে ১২ ডিসেম্বর কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।