ভারতকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান বলেছেন, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকে আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের পাকঘরে কী পাকানো হয় আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই না। আমাদের পাকঘরে উঁকি মেরে তাকানোর চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন কিন্তু নিজের চেহারা একবার আয়নাতে ভালোভাবে দেখুন।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) জামায়াতে ইসলামি মৌলভীবাজার জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে তিনি একথাগুলো বলেন।
জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. মো. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগেই হত্যাকান্ড শুরু করেছিল। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে তা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পেছনের দরজায় বোঝাপড়া করে নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় এসেই তারা খুনের রাজনীতি শুরু করে। প্রথমেই তারা পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। দেশপ্রেমিক ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করে। বিডিআরকে ধ্বংস করে সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করেছে। সাড়ে ৮ হাজারকে সদস্যকে জেলে পোড়েছে। জেলের ভেতরে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩’শ মারা গেছেন।
জামায়াতের জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলীর পরিচালনায় কর্মীসম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয়, সিলেট বিভাগীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
তিনি ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে বলেন, ওবায়দুল কাদের মুখে ভেংচি কেটে কেটে বলতেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে বিএনপি-জামাত দেশে দুই দিনের মধ্যে ৫ লক্ষ মানুষকে খুন করবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘৫ তারিখের পর দুই দিনে কি বাংলাদেশে ৫ লক্ষ মানুষকে খুন করা হয়েছে? তিনি বলেন, দেশে মানুষ খুন হয় নি। কারণ তাদেরকে যারা দোষারোপ করতো তারা ভালো মানুষ। তাদের কোন মাসির বাড়ি নেই, দিদির বাড়িও নেই। তাদের কোন স্বামীর বাড়িও নেই। এই দেশই আমাদের দেশ।
ডা. শফিক আরো বলেন, চক্রান্ত করে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর নাম বদলে তারা বিজিবি দিল। বাাংলাদেশ রাইফেলস নামের ভেতরে একটি শৌর্য বীর্য আছে। এখন নাম দিয়েছে বর্ডারের চৌকিদার। তারা নাম বদলিয়েছে, ড্রেস বদলিয়েছে। বিদ্যুত বন্ধ করে রাতের অন্ধকারে খুনিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটি বিশেষ দেশের প্লেন সেদিন কেন এসেছিল ঢাকায়? এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল কিভাবে?
আওয়ামী লীগের জুলুম নির্যাতন সম্পর্কে আমিরে জামায়াত বলেন, আওয়ামী লীগ কাউকেই ছাড় দেয় নি। তারা জামায়াতের পর, বিএনপিকে ধরেছে, তারপর হেফাজত এবং দেশের আলেম উলামাকে অপদস্থ করেছে। সাংবাদিকদের খুন, গুম করেছে। জেলে পুরেছে।
তিনি বলেন, তারা দেশকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তি, মেজরিটি, মাইনিরিটি শক্তি এইভাবে কতভাবে যে তারা মানুষকে ভাগ করেছে। কারণ একটা জাতিকে যখন টুকরো টুকরো করা যায় তখন তাদেরকে গোলাম বানানো সহজ যায়। তারা মনে করেছিল তারা দেশের মালিক আর আমরা ভাড়াটিয়া। কিন্তু দেশের মালিকরা দেশে রয়ে গেছে কিন্তু ভাড়াটিয়ারা পালিয়ে গেছে।
কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও সিলেট বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, ঢাকা পল্টন থানার সভাপতি শাহীন আহমদ খান, সিলেট জেলা আমির মো. হাবিবুর রহমান, সিলেট মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগরীর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, সিলেট জেলা আমির মো. হাবিবুর রহমান, মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জামায়াতের সাবেক আমির সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মো. আব্দুল মান্নান, হবিগঞ্জের জেলা আমির কাজী মখলিছুর রহমান, জামায়াতের মৌলভীবাজার কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, শিবিরের সিলেট মহানগরী সভাপতি শরীফ মাহমুদ,সদরের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, কুলাউড়া আমির আব্দুল মুনতাজিম, রাজনগর আমির আবু রাইয়্যান শাহিন, মৌলভীবাজার পৌর আমির তাজুল ইসলাম, মৌলভীবাজার শিবিরের জেলা সভাপতি হাফিজ আলম হোসাইন, মৌলভীবাজার পৌর শিবিরের সভাপতি তারেক আজিজ।
এছাড়া সম্মেলনে বন্ধুপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, মৌলভীবাজার খেলাফত মজলিসের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সবুর।