ডিজিটাল ডিভাইসে বই পড়ার চেয়ে একটা বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে-পাল্টে পড়া অনেক আনন্দের বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলা একাডেমিতে যুক্ত হয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বইমেলা দেরিতে শুরু করতে হলো। প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো। এ কারণে দেরি করে শুরু করতে হলো। আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করতে পারছি সেটাই বড় কথা। বাংলা ভাষা মায়ের ভাষা, কথা বলার অধিকার। এই ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। করাচি সাহিত্য সম্মেলনে ৪৭-এ ঘোষণা হয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। তখনই প্রতিবাদ জানানো হয়। ৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন তিনি। অন্যান্য সংগঠন নিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। সেই পথ বেয়ে ৫২-তে প্রাদেশিক পরিষদের সভা ছিল। বাজেট সেশনে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তটাও তার দেওয়া ছিল। রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা আদায় করতে হয় আমাদের।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাণের মেলা। সেটা না হতে পারলে সবার মন খারাপ হয়। আমাদের ভাষার অধিকারে বারবার আঘাত এসেছে। আরবি অক্ষরে বাংলা ভাষা, রোমান হরফে বাংলা লেখার বিষয়টি এলো। বারবারই প্রতিবাদ করা হয়েছে। একটি জাতি সবসময় উন্নতি করতে পারে ভাষা সংস্কৃতির উন্নতি হলে। প্রতিটা আন্দোলন সংগ্রামে সংস্কৃতিসেবীদের ভূমিকা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে তার অবদানকেও মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই ও তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যে রিপোর্ট দিতো, সেগুলোতে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ভাষার জন্য রক্তদানের মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি, মাতৃভাষায় কথা বলার সুযোগটিও পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। অনেক আঘাত ও বাধা এসেছে। সব অতিক্রম করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বলতেন, জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জনের জন্যই ছিল আমাদের সংগ্রাম।’
অনুবাদের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষার গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল নিজের ভাষাকে গুরুত্ব দিলেই হবে না। অনুবাদ সাহিত্য যেন আরও ভালো হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমাদের বাংলা সাহিত্য যেন অন্য ভাষাভাষীরা জানতে পারে, সেদিকে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনি অন্য ভাষার সাহিত্যও আমাদের জানতে হবে।’
মেলা উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ প্রদান করেন। ১৫ জনকে বিশিষ্ট লেখক-কবি-সহিত্যিক এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার -২০২১’ তুলে দেন।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, কবিতায় আসাদ মান্নান ও বিমল গুহ; কথাসাহিত্যে ঝর্না রহমান ও বিশ্বজিৎ চৌধুরী, প্রবন্ধ/গবেষণায় হোসেনউদ্দীন হোসেন, অনুবাদে আমিনুর রহমান ও রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, নাটকে সাধনা আহমেদ, শিশুসাহিত্যে রফিকুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় পান্না কায়সার, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণায় হারুন-অর-রশিদ, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে শুভাগত চৌধুরী।
আরও পুরস্কার পেয়েছেন আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে সুফিয়া খাতুন ও হায়দার আকবর খান রনো এবং ফোকলোরে আমিনুর রহমান সুলতান।